বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন




বিএনপির জোট আর নেই: ফখরুলের ঘোষণা

বিএনপির জোট আর নেই: ফখরুলের ঘোষণা

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ২:২৬ pm
Bangladesh Nationalist Party BNP Mirza Fakhrul Islam Alamgir বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
file pic

বিএনপির সঙ্গে জোট নেই, জামায়াতের আমির শফিকুল ইসলামের বক্তব্যের তিন মাসেরও বেশি সময় পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানিয়েছেন একই কথা।

১০ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীতে দলটির বিভাগীয় সমাবেশ বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তাদের কোনো জোট এখন আর নেই। সমমনা দলগুলো একই দিন একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ফখরুল আসেন তাদের দলের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে। এ সময় এক প্রশ্নে জোট নেই জানিয়ে সমমনা দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করার কথা জানান তিনি।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি গত ১২ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিক যে বিভাগীয় সমাবেশ করে আসছে, তার শেষ কর্মসূচি হিসেবে শনিবারের এই সমাবেশ ডাকা হয়েছে। তবে সমাবেশটি কোথায় হবে, এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি জড়ো হতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু দলটিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

অনুমতি ছাড়াই বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে বুধবার পুলিশের সঙ্গে দলটির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপর দলীয় কার্যালয়ে অভিযান হয়। পুলিশ জানিয়ে দেয়, সড়কে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তারা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।

এই অবস্থায় মির্জা ফখরুলের এই সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতিনিধি পাঠায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমও।

বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশটি কোথায় হবে। জবাবে ফখরুল বলেন, তাদের সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে। তারা সেখানে যাবেন, বাধা এলে জনগণই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি বলেন, বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দিলে দিতে হবে সরকারকেই। তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হলে তারা বিবেচনা করবেন।

শনিবার কোনো বিশৃঙ্খলা হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে, এটিও জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, বিরোধী দল ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সেদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার ব্যবস্থা তাদেরই করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিনিধি জানতে চান, এ ক্ষেত্রে বিএনপির শরিক দলগুলোর কী অবস্থান।

জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা বলেছি, অন্য দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচি পালিত হবে একই সঙ্গে, যাকে আমরা যুগপৎ বলে থাকি। সবাই নিজের পছন্দের এলাকা বা অফিসে কর্মসূচি পালন করবে।’

সমমনা যে দলগুলো তারা কি তাহলে ১০ ডিসেম্বর আলাদা আলাদা সমাবেশ করবে?- এমন প্রশ্ন রাখেন আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী। ফখরুল জবাব দেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন মানেই এটা।

‘১০ তারিখে আমাদের লাস্ট ডিভিশনাল প্রোগ্রাম। এখান থেকে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ও আমাদের দাবি তুলে ধরব। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদের বিলুপ্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। এই দাবিতে সেদিন আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি আসবে আমাদের।’

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপির নেতৃত্বে যে জোট গঠন করা হয়, প্রথমে সেটি ছিল চারদলীয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী এবং আজিজুল হকের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি।

বিএনপি-জামায়াত জোট যে ভেঙে গেছে সেটি দলের রুকন সম্মেলনে গত ২৭ আগস্টই জানিয়েছিলেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। কিন্তু বিএনপি ছিল নীরব।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এরশাদ জোট ছেড়ে চলে গেলেও তার দলের একাংশ বিজেপি নামে দল গঠন করে জোটে থেকে যায়।

এরপর ধীরে ধীরে জোটের দল বেড়ে হয় ১৭, পরে হয় ২০। এখন তা ২০-দলীয় জোট নামেই পরিচিত।

গত কয়েক বছরে এই জোট থেকে প্রয়াত নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, আন্দালিভ রহমানে পার্থর বিজেপিসহ অনেকগুলো দল বেরিয়ে যায়। তবে জোটের অন্য কয়েকজন নেতা প্রতিবারই একই নামে দল গঠন করে জোটে থেকে যান। ফলে ২০-দলীয় জোটে দলের সংখ্যা কম পড়েনি।

তবে প্রধান শরিক দল জামায়াতই আসলে এই জোটের প্রাণ। তবে গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এই জোটের গাঁথুনি নিয়ে দেখা দেয় প্রশ্ন। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব নিয়ে আলোচনা ওঠে।

এর মধ্যে গত ২৭ আগস্ট কুমিল্লার একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে গেছে।

সেদিন তিনি দলের নেতাদের বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা ছিলাম শুনে হয়তো ভাবছেন কী হয়েছে এখন। হ্যাঁ, হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জোট দেশের জন্য উপকারী একটা জোট ছিল। ৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। তার পরে আর ফিরে আসেনি।’

এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু একাধিক বক্তব্যে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আর নয়।’ তবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোট ভেঙে যাওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জামায়াত নেতার বক্তব্য আলোড়ন তুললে ২৮ আগস্ট তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’

পরের দিন আরেক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের জন্য চাপাচাপি করলে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন, জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি উত্তর দেব না। জিজ্ঞাসা করাটা আপনাদের যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ঠিক তেমনি উত্তর না দেয়াটাও আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনারা গণতান্ত্রিকভাবে যা খুশি বলতে পারেন, লিখে দেন নো প্রবলেম।’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD