সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন




অমিক্রনের নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা

অমিক্রনের নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা: দেশে অমিক্রনের নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:৪৪ am
Omicron ভ্যাকসিন vaccine vaccination Booster Dose কোভিড ১৯ টিকা করোনা corona covid corona covid করোনা বুস্টার ডোজ
file pic

দেশে অমিক্রনের নতুন ধরন নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএফ-৭’ এর প্রভাবে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারো সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ‘বিএফ-৭’, যা ‘বিএ-৫’ এর একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। ভাইরাসটি একজন থেকে ১৮ জনের শরীরে সংক্রমিত করতে পারে। অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি চারগুণ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানিয়েছেন, চীন ও ভারতসহ করোনাভাইরাসের নতুন উপ-ধরন শনাক্ত হয়েছে। এমন দেশগুলো থেকে যেসব সন্দেহভাজন যাত্রী বাংলাদেশে আসবেন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে করোনার নতুন উপ-ধরন বিএফ-৭। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে আসা সন্দেহভাজন যাত্রীদের স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে।

যেসব দেশ থেকে সন্দেহজনক যাত্রী পাওয়া যাবে, তাদের নিজ খরচে সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ জন্য শিগগিরই সংশ্লিষ্ট হোটেলগুলো নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মহাখালীর কোভিড হাসপাতালে চীনের চার নাগরিককে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
দেশে এখনো করোনার নতুন উপধরন মেলেনি: বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখনো করোনার নতুন উপধরন বিএফ-৭ এর উপস্থিতি পাইনি। চীন থেকে আসা কোভিড পজেটিভ চার জনের জিনোম সিকোয়েন্সের ফল চলতি সপ্তাহ কিংবা আগামী সপ্তাহের শুরুর দিন মিলতে পারে। সারা দেশ থেকে যারাই কোভিড পজেটিভ হোক, তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করার জন্য আইইডিসিআরে পাঠাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন, অমিক্রনের নতুন উপধরন ঠেকাতে বেশি আক্রান্ত দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নিজস্ব অর্থে কোয়ারেন্টিনে রাখা যায় কিনা, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি বাস্তবায়ন করবে অধিদপ্তর। তিনি বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ‘বিএফ-৭’, যা ‘বিএ-৫’ এর একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। ভাইরাসটি একজন থেকে ১৮ জনের শরীরে সংক্রমিত করতে পারে। তার মানে অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি চারগুণ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটির উপসর্গ অমিক্রনের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতো। তবে এর ভয়াবহতা এখনো জানা যায়নি। যারা টিকা নেননি তাদের মাঝে এই সংক্রমণের হার অনেক বেশি জানিয়ে ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, গর্ভবতী নারী, ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর মধ্যে ভারতেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই সবাইকে করোনা টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখার পরামর্শ কারিগরি কমিটির: অমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ.৭ এর প্রভাবে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থায় দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রস্তুত রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসব পরামর্শ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

কারিগরি পরামর্শক কমিটি জানায়, অমিক্রনের নতুন ধরন অত্যন্ত সংক্রামক। সমপ্রতি চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিক্যুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব দেশে অমিক্রন ধরনের বিএফ.৭ উপধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

কমিটির পরামর্শে বলা হয়, গত ২৪শে ডিসেম্বর রাতে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে চলমান কোভিড সংক্রমণ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। (১) কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনিক্যাল কমিটি সব সময় পর্যালোচনা করছে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরছে। (২) ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওয়াত আনার ব্যাপারে সব প্রকার জনসংযোগ, প্রচার প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) ফাইজার তাদের ৯ মাস মেয়াদি ভ্যাকসিনের মেয়াদ ১২ মাস এবং ১২ মাস ভ্যাকসিনের মেয়াদ ১৫ মাস বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, যা দেশে বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে দেয়া হচ্ছে বলে কমিটি মনে করে। (৪) আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড-১৯ এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। (৫) পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। (৬) দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া প্রয়োজন।

বিদেশি যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদারের নির্দেশ: স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সন্দেহজনক যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল ও জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। এমতাবস্থায় এসব দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD