শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন




নতুন বছরে যত প্রত্যাশা ঢাকা চেম্বারের

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৩ ৯:০৪ pm
Dhaka Chamber of Commerce & Industry DCCI ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ডিসিসিআই
file pic

কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব বাংলাদেশের ক্রমবর্ধনশীল প্রবৃদ্ধির গতিধারাকে কিছুটা স্থবির করলেও, উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী মনোভাব, সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে আশাবাদী করে তুলেছে। ২০২৩ সালে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে আরও ত্বরান্বিত করতে রফতানিমুখী উৎপাদনশীল শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন ও সহনীয় মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সহজে ব্যবসায় পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় হ্রাস, স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক অবকাঠামোগত পরিবেশ উন্নয়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ, সম্ভাবনাময় রফতানি খাত নির্ধারণ, সিএমএসএমই’র জন্য ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ এবং মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করার জন্য ডিসিসিআই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

রবিবার (১ জানুয়ারি) ঢাকা চেম্বার থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি-নির্ভর উৎপাদনমুখী শিল্পপণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতিযোগী সক্ষমতায় আমরা (ডিসিসিআই) ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। ডিসিসিআই মনে করে, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে ‘প্রেডিক্টেবল প্রাইসিং পলিসি’ অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দ্রুত নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে আরও জোরদার, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি এবং আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এছাড়া শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক এবং সরকারকে এর ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।

বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলো দেশের আর্থিক খাতকে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, যার ফলে স্থানীয় রফতানিমুখী শিল্পের জন্য জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও সাপ্লাই চেইনের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রণোদনার ওপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে কারেন্সি সোয়াপ-এর বিষয়টিতে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এছাড়া আর্থিক খাতে তারল্য সংকট মেটাতে সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কার্যক্রম ও অন্যান্য সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে এ খাতে সংকট কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে বলে মনে করে ডিসিসিআই।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারকে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি হারে ঋণ নিতে হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি স্থানীয় উৎপাদন খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। উল্লেখ্য, বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঋণ প্রবাহ বিঘ্নিত হলে স্থানীয় বিনিয়োগ কমে আসতে পারে, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অটোমেশন, বিদ্যমান রাজস্ব আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণ এবং রাজস্ব আহরণের নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করে করজাল বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেছে ঢাকা চেম্বার। এক্ষেত্রে বিদ্যমান করদাতারা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রফতানির প্রবৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে রফতানির সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে দেশীয় পণ্যের প্রবেশাধিকার আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একইসঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোটগুলোর সঙ্গে এফটিএ সইয়ের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে ডিসিসিআই। এলডিসি হতে উত্তরণের এই ট্রানজিশনাল সময়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ ও উপযুক্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন। রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, নিরবচ্ছিন্ন শিল্প উৎপাদন, স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে সম্প্রসারণ, উচ্চ প্রবৃদ্ধির রফতানি সম্ভাবনাময় খাত ও বাজারের উপর গুরুত্ব প্রদান, কর ও ট্যারিফ কাঠামোর সংস্কার, উত্তরণ পরবর্তী সময়ে যাতে বিদ্যমান ‘ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজারর্স (আইএসএম)’ বজায় রাখা যায়, তা আদায়ে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি একান্ত জরুরি।

উল্লেখ্য, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ বিশেষ করে কোম্পানি আইন, সালিশি আইন ২০০১, দেউলিয়া এবং ইনসলভেন্সি আইনেরও সংষ্কার জরুরি। স্থানীয় শিল্প ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুসারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা কাজে লাগিয়ে উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমশক্তি রফতানির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যথার্থ প্রয়োগের জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়ার সম্পর্ক জোরদারের কোনও বিকল্প নেই।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD