শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন




করোনাকালে দীর্ঘসময় লকডাউনের প্রয়োজন ছিল না: বিআইডিএস

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩ ৯:০২ pm
Bangladesh Institute Development Studies BIDS বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস
file pic

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় লকডাউনের প্রয়োজন ছিল না। পাশাপাশি করোনার হাত থেকে মানুষকে প্রাণে বাঁচাতে কোনো উদ্যোগই কার্যকর ছিল না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. কাজী ইকবালের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. আনিস চৌধুরী। তিনি তার রচিত ‘নুগেট ইন টু লকডাউন? বিহেভিয়ারাল ইকোনমিস, আনসার্টিনিটি অ্যান্ড কোভিড-১৯’ শীর্ষক বই থেকে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোভিডের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে নেওয়া কোনো উদ্যোগই কার্যকর ছিল না। এসব কারণে লাভের থেকে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। এসব উদ্যোগের অধিকাংশই নেওয়া হয় রাজনৈতিক চিন্তা ও দেখাদেখি থেকে, অর্থাৎ অন্য দেশ করছে আমরাও করি। এছাড়া জনগণকে দেখানো যে সরকার তাদের জন্য দৃশ্যমান কিছু করছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের প্রয়োজন ছিল না। এতে যে পরিমাণ আর্থিক, সামাজিক ও মানুষিক ক্ষতি হয়েছে, সে হিসেবে তেমন লাভ আসেনি। পাশাপাশি কোভিডের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় অন্যান্য রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু সেদিকে নজর ছিল না গণমাধ্যমসহ নীতিনির্ধারকদের।

ড. আনিস চৌধুরী বলেন, কোভিডে কিছুই করার দরকার ছিল না। তাহলে প্রাণ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সবকিছুই বাঁচত। ব্রিটেনে যারা কোভিডে মারা গিয়েছেন, তারা অধিকাংশই ঘরে ছিলেন। সুইডেনে যারা মারা যান তারাও বেশিরভাগ ঘরেই ছিলেন। প্রথম দিকে স্বল্প মেয়াদের লকডাউন ঠিক ছিল। তখন বোঝা যাচ্ছিল না যে কোথা থেকে কি হচ্ছে। কিন্তু যখন সবকিছু পরিষ্কার হলো তখন কেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন দিয়েছিল? এর ফলে সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানুষিক এবং শিক্ষায় ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে আগামী দুই প্রজন্ম লাগবে।

তিনি বলেন, লকডাউন যে জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার উদাহরণ হচ্ছে—ইউরোপের ২৪টি দেশে কঠিন ও হালকা লকডাউন ছিল, কিন্তু মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। বিশ্বের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছিল কোভিড নিয়ন্ত্রণ। ফলে অন্যান্য রোগসহ কোনোদিকেই নজর দেওয়া হয়নি। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমে গেছে। লকডাউনের কারণে অনেক অপরচ্যুনেটি কস্ট হয়েছে। সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। নীতিনির্ধারকদের এটা বোঝার দরকার ছিল যে সম্পদ সীমিত। এটাকে একদিকে লাগালে অন্যান্যদিকে ব্যবহার করা যায়নি। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি শুধু যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে সেটি নয়। এর পেছনে কোভিডের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলোর প্রভাবও দায়ী।

করোনা প্রতিরোধী টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই থেকে চার ডোজ টিকা দিয়েও অনেককে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাহলে টিকার পেছনে এত সম্পদ ব্যয় করার দরকার কি ছিল?

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বে স্প্যানিশ ফ্লুতে মারা গিয়েছিল ২১৯ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মানুষ। আর ২০১৯-২০ সালে কোভিডে মারা গেছে ৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন মানুষ। তাহলে দেখা যাচ্ছে স্প্যানিশ ফ্লুর চেয়ে করোনা কোনোভাবেই বড় কোনো মহামারি ছিল না। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্প্যানিশ ফ্লুতে সব বয়সের মানুষই মারা গিয়েছিল। আর করোনায় বয়স্করাই বেশি মারা গেছেন। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লুতে মারা যায় ৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মানুষ। ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে মারা যান ২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনা।

আরও বলা হয়েছে, করোনা মহামারির আগেও অন্যান্য রোগসহ স্বাভাবিক মৃত্যুও বিশ্বব্যাপী কম হয়নি। হিসাব করলে দেখা যায়, করোনার চেয়েও সেসব মৃত্যু ছিল অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি চলার সময়, ক্যান্সার, কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগেও মানুষ মারা গেছেন। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা ছিল না। এদিকে এসব মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমসহ সবার মাঝে খুব বেশি আলোচনাও ছিল না। সবাই ব্যস্ত ছিলেন কোভিডের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে।

ইংল্যান্ড ব্যাংকে কর্মরত অর্থনীতিবিদ ডেভিড মাইলস’র উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি ৯ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয়, তাহলে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হবে ৬৮ বিলিয়ন পাউন্ড। আবার মাত্র ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি ৯ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয় তাহলেও ক্ষতি হবে ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। যদি ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে ১৫ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয় তাহলে নীট ক্ষতি হবে ৩২৪ বিলিয়ন পাউন্ড। সুতরাং ক্ষতির বিষয়গুলো মাথায় নেওয়ার দরকার ছিল।

ড.কাজী ইকবাল বলেন, সেমিনারের আলোচনা থেকে যা বোঝা যায় তা হচ্ছে—করোনা মোকাবিলায় নেওয়া উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চিন্তা ও দেখাদেখির বিষয়টিও কাজ করেছে। এর অর্থ ওই দেশ লকডাউন করছে, আমরাও করব। রাজনৈতিক চিন্তা হলো সরকার জনগণের জন্য কিছু একটা করছে। এটা দৃশ্যমান কিছু। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে সরকার আমাদের পাশে আছে। তবে যদি নির্ধারণ পর্যায়ে তরুণরা থাকত তাহলে হয়তো এত লকডাউন হতো না। তুলনামূলক বয়স্করাই নীতি নির্ধারণ করেন বলেই লকডাউনের মতো কর্মসূচি তাতের পছন্দ ছিল। তবে করোনার কারণে দেখা গেছে, যারা তরুণ ও কর্মজীবী মানুষ তারা বেশি মৃত্যুর মুখে পড়েননি। তুলনামূলক বয়স্করাই বেশি মারা গেছেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD