বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯ অপরাহ্ন




দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, প্রবৃদ্ধি কমে যাবে: জাতিসংঘ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩ ১:২৮ pm
দাম বাড়বে কমবে inflation food market খাদ্যপণ্য খাদ্য পণ্য মূল্যস্ফীতি
file pic

আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে, কিন্তু একই সঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপ। এতে দেশের মানুষ দ্বৈত চাপের মুখে পড়বে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের পূর্বাভাস, ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৬ শতাংশ এবং পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তাদের আংশিক হিসাব, ২০২১–২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

কিন্তু উদ্বেগের জায়গা হলো মূল্যস্ফীতি। জাতিসংঘ বলছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ সেই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকবে—এটাই পূর্বাভাস। তবে পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩–২৪–এ মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা–২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিকবিষয়ক বিভাগ এ প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে।

২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মূল শঙ্কার জায়গা ছিল মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোসহ বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনে করোনাজনিত লকডাউনসহ নানা কারণে মূল্যস্ফীতির সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের হাতে থাকা সেই পুরোনো কিন্তু অব্যর্থ অস্ত্র প্রয়োগ করে। সেটা হলো, নীতি সুদহার বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে যে হারে অর্থ ধার দেয়, তা বৃদ্ধি করা। ফলে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর ঋণ নিতে আগ্রহী হয় না। সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে যায়। একপর্যায়ে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসে, কিন্তু তা সম্ভব হয় প্রবৃদ্ধির বিনিময়ে। মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও বাংলাদেশসহ উন্নত দেশগুলোতে তা এখনো লক্ষ্যমাত্রার অনেক ওপরে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি‍‍ ‍+ অর্থনৈতিক শ্লথগতি = এটাই এখনকার বাস্তবতা। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এটা হচ্ছে স্ট্যাগফ্লেশন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে আমাদের বিশেষ উদ্বেগের কিছু নেই। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে, সেই ধারা হয়তো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। প্রবৃদ্ধি যাও হচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তার সুফল সিংহভাগ মানুষ পাচ্ছে না। অর্থাৎ মানুষের প্রকৃত আয় বাড়ছে না।’

সেলিম রায়হান আরও বলেন, নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ ছাড়া এখনকার মূল্যস্ফীতি চাহিদা নয়, বরং সরবরাহব্যবস্থার কারণে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নীতি সুদ বাড়ালে বিনিয়োগ কমতে পারে। তাতে বেকারত্ব আরও বাড়বে। তাঁর মত, মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো উচিত।

এদিকে গত বছর নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। এতে যেমন দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে, তেমনি বিদেশি ঋণ পরিশোধেও সরকারের ব্যয় বাড়ছে। প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের ব্যয় তার মোট ব্যয়ের ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশের কর–জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশ। সরকারের ব্যয়ও তা–ই কম। এই দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশকে কর–জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। সে জন্য কর ব্যবস্থা সংস্কারসহ করহার বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এসব পরিবর্তন আনতে সময় লেগে যাবে, রাতারাতি তা সম্ভব নয়।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD