সদস্য কারখানাগুলোকে চিঠি দিয়ে নকল পণ্য রপ্তানি বিষয়ক সাম্প্রতিক একটি অভিযোগের বিষয়ে সতর্ক করেছে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সোমবার সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান সদস্যদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে পণ্য তৈরির ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এর প্রকৃত ব্র্যান্ড মালিকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ, চীনসহ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর নামের লোগো হুবহু নকল করে পণ্য তৈরি ও রপ্তানি হচ্ছে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) এর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে; যারা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কার্যকরের দিকটিও দেখভাল করে।
এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের সুবিধা কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সম্প্রতি ইউএসটিআর থেকে এ বিষয়ে একটি নোটিস বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়েছে। সরকারের পক্ষে থেকেও বিষয়টি আমলে নিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ নেতারাও ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সোমবার ফারুক হাসানের চিঠিতে বলা হয়, “এ লেখার মাধ্যমে আপনাদের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, যে পণ্যগুলো আপনারা তৈরি করছেন বা আগামী দিনগুলোতে করবেন, সেগুলোর প্রকৃত মালিকানার বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করে নিশ্চিত হোন, বিশেষ করে অর্ডারটি যদি ব্র্যান্ডের লাইসেন্সধারী, আমদানিকারক বা ব্র্যান্ডের মালিকের কোনো এজেন্টের দ্বারা দেওয়া হয়।”
বিজিএমইএ এ বিষয়ে সচেতনতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কর্মসূচি নেবে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, যার মধ্যে থাকবে সচেতনতা বাড়ানো, প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ও তথ্য প্রচার ইত্যাদি। “আইপিআর লঙ্ঘন করে যে ব্যবসাই আমাদের কাছে আসুক না কেন, আমরা ‘না’ বলবো।”
নকল পণ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটতে যাচ্ছে চিঠিতে সেই বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
চিঠিতে বলা হয়, “সম্প্রতি বাংলাদেশের মিডিয়ায় ইউএসটিআর এর ‘স্পেশাল রিভিউ অন আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়্যাল প্রপার্টি রাইটস) প্রটেকশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট’ নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং প্যারিসভিত্তিক ইউনিয়ন ডাস ফেব্রিকান কাউন্টারফিট বা নকল পণ্য রপ্তানিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউএসটিআর এর কাছে বাংলাদেশ, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইউএসটিআর এর স্পেশাল ৩০১ রিভিউ এর পর্যালোচনার অগ্রাধিকার তালিকায় (ওয়াচ লিষ্টে) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছে।
“আবেদনে এএএফএ উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশ শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈধ উৎস হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু এখানে নকল পণ্য উৎপাদন বাড়ছে, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নকল পণ্য চালান ক্রমবর্ধমান হারে জব্দ করা হচ্ছে। বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত সুসংগঠিত কাউন্টারফিট পণ্য নেটওয়ার্কটি সুকৌশলে যুক্তরাজ্য, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশের ভোক্তাদের কাছে কাউন্টারফিট পণ্য বিক্রয় করছে।”
দেশের প্রধান পণ্য পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনটির চিঠিতে আরও বলা হয়, “বিজিএমইএ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে এবং আমরা এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের সাথে কাজ করছি। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই ইউএসটিআর এর অভিযোগের বিষয়ে একটি প্রাথমিক লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কাজ করছে।” অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিলেও এর ধরন সম্পর্কে আপত্তি তুলছেন বিজিএমইএ নেতারা।
সংগঠনের সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ থেকে নকল পণ্য রপ্তানি হয় বলে একটি ঢালাও অভিযোগ করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো কারখানার নাম আসেনি। নাম আসলে আমরা যাচাই বাছাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু এভাবে ঢালাও অভিযোগ আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
সরকার বিয়ষটি নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইপিবি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া নকল পণ্য রোধে বিজিএমইএও বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
নকল পণ্য রোধে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিজিএমইএ থেকে আমরা একটা নিয়ম চালু করেছি। ইউডির সঙ্গে একটা ডিকলারেশন কারখানাগুলোকে দিতে হবে। কোন ব্র্যান্ডের, কোন লেবেলের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে সেটা থাকতে হবে ওই ডিকলারেশনে। তারপর তারা ইউডি পাবে।”
প্রশাসন ও ইপিবিকেও এ বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, “তারা কোন কোম্পানিকে রপ্তানি সার্টিফিকেট দিচ্ছে সেটা তাদের নিশ্চিত হতে হবে। মহাসড়কে অনেক পণ্য চুরি হয়ে যায়। এসব পণ্যও বিদেশে চলে যেতে পারে। সেই দিকটাও দেখতে হবে।”