ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে জয় ছিল ১৬৯ রানের। ২০২০ এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এসেছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। কাকতালীয়ভাবে একই মাঠে সেই রেকর্ড ভেঙে শনিবার আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশ দল হারায় ১৮৩ রানের ব্যবধানে। এই জয় পেতে নিজেদের স্কোর বোর্ডে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডও ভেঙেছে বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে দুই সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়েও তুলেছে ৩৩৮ রান ৮ উইকেট হারিয়ে। জবাব দিতে নেমে ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারিরা। ১-০ তে এগিয়ে থেকে আজ সিরিজ জয়ের মিশনে মাঠে নামবে তামিম ইকবালের দল। তবে সিলেটে আজ রয়েছে বৃষ্টির শঙ্কা। ম্যাচের আগের দিন গোটা দল বিশ্রাম নেয় হোটেলে। তবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বৃষ্টির দিনেও অনুশীলন করেন।
কারণ, ব্যাটে যে তার রান নেই! ২০২২ এর আগষ্টে তামিম তার শেষ ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়েতে। এরপর পাঁচ ওয়ানডে খেলে তার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ৩ রান। বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ দলের পারফরম্যান্সে আপ্লুত। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ কিছুর প্রত্যাশায় তিনি। হেরাথ বলেন, ‘আমি মনে করি এটি দলের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশেষ করে তাওহিদ ও সাকিব, তারপর মুশফিক এবং ইয়াসিরও। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ছিল চমৎকার। আমরা এই মুহূর্তে আমাদের ক্রিকেটের একটি ব্র্যান্ড দেখাচ্ছি। আশা করি আগামীকালও (আজ) আমরা একই কাজ করব।’
অন্যদিকে ২০১৬ থেকে টানা ৭ বছর দেশের মাটিতে কোনো ওয়ানডে সিরিজে হার ছিল না বাংলাদেশের। সবশেষ সিরিজ হারটি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ এ। কাকতালীয়ভাবে ৭ বছর পর বাংলাদেশের সেই গর্বের রেকর্ডটি ভেঙে দেয় ফের ইংলিশরা। সবশেষ টাইগারদের তারা ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। তবে আবারো দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের ধারায় ফেরার মিশন শুরু টাইগারদের। আজ আইরিশদের হারালেই দেশের মাটিতে আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিবে টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচের জয়ী একাদশ নিয়েই আজ মাঠে নামতে পারে টাইগাররা। পরিবর্তনের কোনো আভাস জানা যায়নি দলের পক্ষ থেকেও। টাইগাররা আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলে ২০০৮ এ নিজেদের মাটিতে। সেবার ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল সফরকারিরা। এরপর ২০১০ এ আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে ১-১ এ সিরিজ ড্র করে টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয় দলকে উপহার দেন একের পর এক রেকর্ড। তবে খুব কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন উভয়েই। সাকিব আউট হন ৯৩ রানে। আর হৃদয় হৃদয় ভাঙেন ৯২ রানে। ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এটি। অবশ্য পাওয়ার প্লের মাঝে দুই ওপেনারকে হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তৃতীয় ওভারেই ফেরেন তামিম ইকবাল। শুরুতেই অধিনায়ককে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশকে পথ দেখায় দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ওপেনার লিটন দাস ও ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত দলকে টানার চেষ্টা করেন। কিন্তু দু’জনই দুই অংকে পৌঁছে আউট হন। এরপর দলের হাল ধরেন সাকিব-হৃদয়। তাদের ব্যাটেই প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশের ইনিংস। বিশেষ করে অভিষেকেই দারুণ ইনিংস খেলা হৃদয়ের সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে পুড়ছে দেশের ক্রিকেট ভক্তরা। যদিও এই ব্যাটার এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যাই মাত্র ১৬। এমন বিরল কীর্তির খুব কাছে থেকেও হাতছাড়া করায় কোনো আক্ষেপ নেই হৃদয়ের। তিনি বলেন, ‘কোনো আক্ষেপ নেই। আমি শুরুতেও তো আউট হতে পারতাম! যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া।’
প্রথম ওয়ানডেতে বোলাররাও কম যায়নি। জবাব দিতে নামা আয়ারল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেয় মাত্র ১৫৫ রানে। ৬.৫ ওভারে ৪২ রান খরচ করলেও একাই ৪ উইকেট তুলে নেন পেসার ইবাদত হোসেন চৌধুরী। এছাড়াও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অব্যাহত রেখেছেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। ৬ ওভারে খরচ করেন ১৫ রান আর নিয়েছেন দুই উইকেট।
অন্যদিকে স্পিনাররা কেন পিছিয়ে থাকবেন! দলের অন্যতম স্পিনার সাকিবের শিকার একটি হলেও নাসুম নিয়েছেন ৩ উইকেট। এমন বোলিং নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত স্পিন বোলিং কোচ হেরাথ। স্পিনারদের নিয়ে গর্ব করে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি ও গর্বিত। স্পিনারদের জন্য এটাই তো চ্যালেঞ্জ, তাই না? আমরা কীভাবে সব ধরনের কন্ডিশনে ভালো বোলিং করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ওরা যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে, কন্ডিশন বুঝে বোলিং করেছে, তাতে আমি খুশি।’