ঈদের ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন লাখো পর্যটক সৈকতে নেচে-গেয়ে ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী পর্যটকের ভিড় এখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের ৭ দিনের ছুটিতে ১০ লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসের ৯০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় দেখা যায়। পর্যটকদের কেউ কেউ সমুদ্রের লোনাপানিতে শরীর ভিজিয়ে আনন্দ–উল্লাসে মেতেছেন। কেউ আবার দ্রুতগতির জলযান জেডস্কি নিয়ে ঘুরে আসছেন গভীর সমুদ্রের জলরাশিতে। অনেকে আবার বালুচরে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। এছাড়া উত্তর পাশে সিগাল, লাবণী পয়েন্টেও হাজার হাজার পর্যটক উপস্থিত হয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। সন্ধ্যা নাগাদ সৈকতের কলাতলী থেকে সুগন্ধা-সিগাল হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে প্রায় এক লাখ মানুষ সমবেত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকবে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সামিয়া-গফুরের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় গফুর বলেন,ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঈদের নামাজ আদায় করে রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেই। সকালে কক্সবাজার কলাতলীর একটি হোটেলে উঠি। তারপর বীচে আসি। এত মানুষ হবে কল্পনা করিনি। অনেক ভালো লাগছে। তবে গাড়ি ভাড়া অতিরিক্ত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সিলেট থেকে আসা জিকু বলেন,জীবনে প্রথমবার কক্সবাজার আসলাম। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। আসার সময় হোটেল বুক করিনি। জানতাম না যে এখানে এসে হোটেলের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তবে কোনো রকম একটি রুমের ব্যবস্থা করেছি। রুমের ব্যবস্থা করলেও সেই রুমের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদে ফেডারেশনভুক্ত আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫ দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। আমাদের হোটেলগুলোতে এরই মধ্যে অনলাইনে বুকিং শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা পর্যটকদের সাড়া পাচ্ছি। এবার প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে। বৈশাখের উত্তাল সাগর এসব পর্যটকদের দেবে ভিন্ন আমেজ। এক্ষেত্রে টানা সাত দিনে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হচ্ছে। পর্যটকদের সেবায় আমরা সব সময়ই প্রস্তুত। পর্যটকদের সেবায় আমরা প্রাথমিক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছি। সমুদ্র সৈকতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সৈকতের প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, সৈকতে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। সৈকতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য দল গঠন করা হয়েছে।