রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামল দিতে রিজার্ভ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের জন্য সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে, এটা মানুষের জন্যই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও তা-ই করছে। তাই আমি আবারো বলব, আমাদের মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হতে হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল জাতীয় সমবায় দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রত্যেক মানুষেরও একটা নিজস্ব চিন্তা থাকতে হবে নিজের জীবন-জীবিকা উন্নত করার। আমরা সে কাজগুলোর সুযোগ করে দিতে চাই। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে। আমাদের কৃষি উৎপাদন বা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্যও সমবায় একান্তভাবে অপরিহার্য বলে মনে করি। কারণ এত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে সমবায় অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এটিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আমি আবারো বলব, আমাদের যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি যুবসমাজ এগিয়ে আসে এবং সমবায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম করতে পারে সব গ্রামের মানুষকে এক করে, তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।
সরকারকে উচ্চমূল্যে সার, জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সাধারণ মানুষের খাদ্য কেনা বা আমাদের চাষ যাতে ঠিকমতো হয় তাই উচ্চমূল্যে সার-জ্বালানি ও ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। বর্তমান যুগে সারা বিশ্বে খাদ্যাভাব, জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে। উন্নত দেশ আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের কথাই বলছি। সেক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে এবং সঞ্চয় করতে হবে, যাতে এ অভিঘাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ রক্ষা পায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি ঘরে ঘরে। যদিও এখন ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এ অবস্থা থাকবে না। আমরা সোলার প্যানেল দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ কেনার পদক্ষেপ নিচ্ছি, যদিও সময়সাপেক্ষ। তবে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারব আমরা। এক্ষেত্রে দেশের সবাইকে একটু সঞ্চয়ের দিকে নজর দিতে হবে। কারো এতটুকু জমি যেন পড়ে না থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি আবারো অনুরোধ করছি।
সমবায় কার্যক্রমে নারীদের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের হাতে টাকা-পয়সা গেলে সেটার যথাযথ ব্যবহার হয়, অপচয় হয় না। এটাও বাস্তব। তার সুফলটা পরিবার পায়, দেশবাসীও পাবে। আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড সব ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১ উেক্ষপণ করেছি। অনলাইনে ডিজিটাল যোগাযোগের সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে কৃষক মাটি পরীক্ষা করা বা পাতা হলুদ হয়ে গেলে কী সার ব্যবহার করতে হবে, কৃষি তথ্যকেন্দ্র থেকে তা জানা যাবে। সেলফোনে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলেই সেখান থেকে জানতে পারবেন কৃষক। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থাটা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। এটা আমরা শুধু শহরের জন্য করিনি, গ্রামের মানুষের জন্যও করেছি। আমাদের সব উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূলের মানুষকে ঘিরে। যুবসমাজ যেন শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই কাজ করতে পারে, সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব আর সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে পারব। এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি চাই, বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা যেন কোনোমতেই ব্যাহত না হয়। আমরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কভিড, যুদ্ধ আর স্যাংশনের কারণে কিছুটা আমাদের থমকে দাঁড়াতে হয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু এ অবস্থা অতিক্রম করেই এগিয়ে যাব।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. তরুণ কান্তি সিকদার।
শুরুতে জাতীয় সমবায় দিবসের একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোট নয়টি সমবায় সমিতি এবং এক ব্যক্তিকে জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২১ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।