সম্মেলনে যোগ দিয়ে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘রিপোর্টের পর রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। এই সম্মেলনে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক দ্রুত ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মিসরের শার্ম আল শেখ নগরীতে রোববার শুরু হয়েছে জতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক ২৭তম সম্মেলন; যা কনফারেন্স অফ পার্টিজ (কপ) হিসেবে পরিচিত।
যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত বিশ্বে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত কয়েক মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়া বিপর্যয় বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছেলাখ লাখ মানুষ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা, আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র খরা, ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং তিন মহাদেশজুড়ে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘রিপোর্টের পর রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।’
‘কপ ২৭ সম্মেলনে অবশ্যই এখন এই গুরুত্বপূর্ণ দশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক দ্রুত ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুদ্ধে হয় আমরা জয়ী হব, নয়তো আমরা হেরে যাব।’
সুনির্দিষ্টভাবে এই লড়াইয়ের অর্থ হলো ১৯ শতকের শেষের দিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হবে। এ জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে।
বিশ্ব এ মুহুর্তে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বজায় রাখার মতো অবস্থায় নেই। গত মাসে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যের উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়েছে।
জাতিসংঘ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে বিশ্বের দেশগুলোর সরকারের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনায় দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়নি।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নতুন প্রধান সায়মন স্টিল এবারের সম্মেলনে গত বছরের নেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোই বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাপক রূপান্তর, যা অবশ্যই ঘটতে হবে- সেপথে এগিয়ে যাওয়ারও তাগাদা দিয়েছেন তিনি।
গত বছর গ্লাসগোর কপ-২৬ সম্মেলনে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। সেগুলো হলো- ধাপে ধাপে কয়লার ব্যবহার কমানো, বন উজাড় ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ করা, মিথেন গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমানো, জাতিসংঘে নতুন জলবায়ু কর্মসূচি পরিকল্পনা জমা দেয়া।
এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে গেলে প্রয়োজন অর্থের। উন্নয়নশীল দেশগুলো চাইছে তাদেরকে এই খাতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হোক। পাশাপাশি সমর্থন দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি উন্নত দেশগুলো গতবার দিয়েছিল তা বহাল রাখা হোক।