দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বন্ড মার্কেট প্রসারিত করতে হবে। তবে ব্যাংকের ঋণের সুদ হার বেধে রাখলে, দেশের বন্ড মার্কেট বড় হবে না। একইসঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারও বড় হবে না। এ নীতি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে উন্নয়নে বড় বাধা বলে মনে করে বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ: জয়েন্ট ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট (জেসিএপি) প্রোগ্রামের মিশন দল।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবে শরিফা খানের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা।
এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়ত-উল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালযয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থ মন্ত্রণালযয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ, অর্থ মন্ত্রণালযয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল বাকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রাজেশ খুল্লারকে অবহিত করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের মিশন দল জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন স্তিমিত রয়েছে।
জেসিএপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কারিগরি সহযোগিতা করছে বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের মিশন দলটি এমন মন্তব্য করেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি হলো ২০২০ সালে ঋণের হারের ক্যাপ প্রবর্তনে বেসরকারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে এবং সরকারি সিকিউরিটিজের ইল্ড বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএসসি) স্কিমের বেশ কিছু ইতিবাচক সংস্কার করায় নতুন ইস্যুর পরিমাণ এখনও বাড়ছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং মার্কেটযোগ্য সরকারি ও বেসরকারি বন্ড ইস্যুতে বাধা দিচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এনএসসি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য যোগ্য বিষয়, ততক্ষণ ফিক্সড আয়ের মার্কেটের উন্নয়ন হবে না। এনএসসি একটি খুচরা পণ্য, তাই এটার একটি সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ঋণের হারের ক্যাপ প্রবর্তনের আগে যে ১৮ দফা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়নি এবং সেটা পুরনো হয়ে গেছে। তাই মিশন দল জেসিএপি অগ্রাধিকার কর্ম পরিকল্পনার প্রস্তাবে সংশোধিত এবং আরও প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে খসড়া তৈরি করে এসেছিল। যেখানে পরিবর্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক এবং মার্কেট পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে।
মিশন প্রস্তাবিত খসড়াটি পর্যালোচনা ও সংশোধিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করে। সেই সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সময় উপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক স্টেক হোল্ডারদের দ্বারা ধারাবাহিক ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাস্তবায়নে সুপারিশ করে। মিশন দলটি দীর্ঘমেয়াদে অর্থ ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটিকে জরুরিভাবে পুনরায় সক্রিয় করার সুপারিশ করেছে।
জয়েন্ট ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট (জেসিএপি) প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হলো- প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করা। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক পূর্বশর্ত করা দরকার, তারা সেগুলো দেখে।