মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন




গোপন সুদের সামে গ্রাহকের টুঁটি চেপে ধরছে আই‌‌পিডি‌সি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৩ ৫:৫৭ pm
IPDC Finance Limited আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড IPDC
file pic

#মোট ঋণ ৮ কো‌টি ৪০ লাখ টাকা
#সুদ আসল পরিশোধ ১০ কো‌টি ৮৩ লাখ টাকা
#গোপন সু‌দ দাবি এক কো‌টি ৫ লা‌খ টাকা

ঋণ নেওয়ার পর শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সুদ ও আসলসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন গ্রাহক। কিন্তু ঋণ পরিশোধের পরও অনাপত্তি দিচ্ছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। উল্টো এখন গোপন সুদের নামে গ্রাহ‌কের কাছে এক কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি রিপোর্টে গ্রাহককে খেলাপি দেখানো হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও মানছে না আইপিডিসি।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইপিডিসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান।

আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আইপিডিসি থেকে ৬০টি কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে গাড়ি কেনার জন্য ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ঋণের টাকা ছাড় হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধ বাবদ ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ টাকা করে ৬০টি চেক নিয়ে নেয় আইপিডিসি। ঋণের টাকায় নিটল টাটা থেকে ১০টি গাড়ি কেনা হয়। যা নিটল টাটাকে সরাসরি পরিশোধ করে আইপিডিসি। সেই ঋণের সর্বশেষ কিস্তি (সুদসহ) গত ৩০ জুন মোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮০ টাকা আইপিডিসিকে পরিশোধ করে আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ।

একইভাবে গাড়ি কেনার জন্য ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৬০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে সুদে আরও ৫ কোটি টাকা ঋণ নেয় আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ। যথারীতি ঋণের টাকা ছাড়ের আগেই ঋণের বিপরীতে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ টাকা করে ৬০টি কিস্তির চেক জমা নেয় আইপিডিসি। এই ঋণের টাকায় র‍্যাংগস মটরস থেকে ১৫টি গাড়ি কেনা হয়। যা র‍্যাংগস মটরসকে সরাসরি পরিশোধ করে আইপিডিসি। গত ৩০ অক্টোবর এই ঋণের সর্বশেষ কিস্তিসহ সুদে-আসলে মোট ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা আইপিডিসিকে পরিশোধ করে আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ।

২৫টি গাড়ি কেনার জন্য আইপিডিসি থেকে মোট ৮ কো‌টি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেয় আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ। শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদে সুদে-আসলে ১০ কো‌টি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু দুটি ঋণের সব টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনও পর্যন্ত আমাদেরকে অনাপত্তিপত্ত দিচ্ছে না লিজিং প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি। যে কারণে গাড়ির মালিকানাও বুঝে পাচ্ছে না আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ। উল্টো এখন এক কো‌টি ৫ লা‌খ টাকা গোপন সু‌দ দাবি করছে আইপিডিসি—বলে অভিযোগ করেন হাবিবুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঋণের সর্বশেষ কিস্তি পরিশোধের পর অনাপত্তিপত্র চাইলে আইপিডিসি অনাপত্তি দিবো-দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে অনাপত্তির জন্য বারবার যোগাযোগ করার পরও অনাপত্তি পত্র না দিয়ে হঠাৎ তারা মৌখিকভাবে জানায়, সুদের হার ১০.৫০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সে কারণে আইপিডিসি উল্লেখিত টাকা পাওনা রয়েছে। অতিরিক্ত দাবি করা এই টাকা পরিশোধ করা না হলে গাড়ি না দিয়ে উল্টো সিআইবি লিস্টে ক্লাসিফাইড (খেলাপি) করে দেওয়ারও হুমকি দেয় আইপিডিসি কর্তৃপক্ষ। যা আমি ও আমার প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করার সামিল। তবে কোন আইনে ও কখন এই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে সে ব্যাপারে আইপিডিসি আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা আলোচনাও করেনি। এক্ষেত্রে তারা আমাদের সম্মতিও নেয়নি।

শুধু তাই নয়, মঞ্জুরি পত্রের শর্তানুযায়ী সুদের হার বাড়ানোর পর কিস্তির টাকার পরিমাণ বাড়ার কথা। কিন্তু এ সম্পর্কেও তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কিংবা কিস্তির টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে নেয়নি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে করোনা মহামারিকালে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমিয়েছে, সেখানে আইপিডিসি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গোপনে আমাদের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। যা নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত এবং ব্যাংকিং নিয়মনীতি বহির্ভূত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে করোনাকালীন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি আইপিডিসি।

আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জানান, গোপন সুদ ও আইপিডিসির হুমকির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করি। এরপর গত ২ নভেম্বর বিষয়টি গ্রাহক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না আইপিডিসি।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি জানানোর পর গত ২৯ ডিসেম্বর বৈঠকে ডাকা হয়। গুলশানে আইপিডিসির প্রধান কার্যালয়ের ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওকে উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও তিনি ছিলেন না। বৈঠকে আইপিডিসি কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত টাকা দাবির পক্ষে তেমন কোনো যুক্তি তুলে ধরতে পারেনি ও আমার প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেনি।

সবশেষে আইপিডিসির হেড অব কালেকশন-বিজনেস ফাইন্যান্স রফিকুল ইসলাম গত ৫ জানুয়ারি তাদের অতিরিক্ত সাড়ে ৩ শতাংশ হারে আরোপিত সুদ থেকে আমাকে ৫ লাখ টাকা মওকুফের প্রস্তাব দেন। আমি ঋণ কমাতে তাদের কাছে কোনো ধরনের আবেদন করিনি। এরপরও আমাকে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নিয়ম বহির্ভূত।

হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে এর আগেও আমরা দুই দফায় ১২ কোটি ও ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করি। সেটি নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি। কিন্তু এবারের হয়রানি নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের (আল হাবিব এন্টারপ্রাইজ) পক্ষ থেকে আইপিডিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করি। এরপর আইপিডিসির লোকজন আমার ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন। পরে তারা সিআইবিতে আমাকে ডিফল্ট করা ও কিভাবে ব্যবসা করি তাও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার ১০০, ৬১১০০০০০৫১১৪ অ্যাকাউন্টটি কোনো কিস্তি বাকি না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ডিফল্ট করে রিপোর্ট করে। যা সব আইনকানুনকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আইপিডিসি আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। তাদের অযৌক্তিক এ দাবি এক রকম অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করার সামিল। তারা আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুনাম নষ্টের চক্রান্ত করছে। এ রকম চলতে থাকলে সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মমিনুল ইসলাম বলেন, আল হাবিব এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। বিভিন্ন সময় সুদহার বেড়েছে, নিময় অনুযায়ী তা সমন্বয় করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত মেনেই খেলাপি হয়েছে, নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করা হয়নি বলে দাবি করেন আইপিডিসি এমডি।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD