‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ আজ বসন্তের প্রথম দিন। একইসঙ্গে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের রং আর ভালোবাসায় একাকার হওয়ার দিন। আজ পহেলা ফাল্গুন। পুরনো দিনের জরাজীর্ণতাকে ছুড়ে ফেলে নতুনত্বকে আলিঙ্গনের দিন। চারুকলায় সমস্বরে সবাই গেয়ে উঠবে কবিগুরুর সেই অমর সংগীত- ‘ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ।’ কিংবা নজরুলের গানে গানে আহ্বান থাকবে যেন নতুন রূপ নিয়ে বসন্তর আগমন ঘটে- ‘আসে বসন্ত ফুলবনে/ সাজে বনভূমি সুন্দরী/ চরণে পায়েলা রুমুঝুমু/ মধপ উঠেছে গুঞ্জুরি।’
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে বর্ণিল থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সকাল থেকে চারুকলায় ঢল নামবে সহস্র তরুণ-তরুণীর। আবালবৃদ্ধবনিতা বাদ যাবে না কেউ। হলুদ-লাল পোশাকে প্রিয়জনকে নিয়ে হাজির থাকবে সকলে। আর ফুটিয়ে তুলবে বাঙালি সংস্কৃতির বর্ণিল আয়োজন। বরাবরের মতো এবারো ফাগুন ও ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে বিশেষ মাত্রা যোগ করছে অমর একুশে বইমেলা।
তাই চারুকলার স্রোােত গিয়ে মিলবে বইমেলায়। রাজধানীর মানুষও প্রশান্তি খুঁজতে ছুটে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বত্র থাকবে এ কোলাহল। বসন্ত মানেই নতুন কলেবর। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। তরুণ-তরুণীর বাসন্তী সাজ বাংলার রাজপথ, পার্ক সর্বত্র স্থানকে রঙিন করে তুলবে।
বসন্ত বরণ উপলক্ষে আজ রাজধানীতে আয়োজন করা হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। একইসঙ্গে বসন্ত ও ভালোবাসার দিনটি অনেকে উদ্যাপন করবেন নিজেদের মতো করে।
বাতাসে যেন মিষ্টি এক আনন্দের আমেজ। শীতের রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠার প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে প্রকৃতির। একই দিনে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে ভালোবাসার দিন। ভালোবাসা দিবস আর বসন্তের রঙ তাই মিলেমিশে এক হচ্ছে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি।
আনন্দের রঙ লেগেছে বাঙালির মনে, দখিনা হাওয়ায় প্রাণবন্ত প্রকৃতি। গাছের ডগায় শোভা পাচ্ছে নতুন পাতা। বাগানে ফুটেছে বাহারি রঙিন ফুল। সবমিলিয়ে সর্বত্র উৎসবের আমেজ আজ। ভাষা, সুর, ছন্দ বলে ‘বসন্ত এসে গেছে।’
শীতের রিক্ততাকে আজ বিদায় জানানোর পালা। যৌবনদীপ্ত এই ঋতুতে প্রকৃতি যেমন অপরূপ সাজে ফেরে, তেমনি সেই রঙ ছুঁয়ে আমাদের মন হয়ে ওঠে রঙিন। বাতাস জানিয়ে যায়, ‘আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’
কমলা, বাসন্তী, হলুদ, সবুজে প্রকৃতির পাশাপাশি সেজে ওঠে উৎসবপ্রেমীরা। প্রকৃতির উৎসব ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেই উৎসবেরই দিন আজ, আজ বসন্তের প্রথম দিন।
এতো গেল বসন্তের কথা! আজ কিন্তু ভালোবাসারও দিন। বসন্তের প্রথম দিনে ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ে মন থেকে মনে। ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভালোবাসা ও আনন্দের মাস। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপনের প্রস্তুতি যেন এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়। ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে প্রতিদিন কোনও না কোনও দিবস আছে। যেন সপ্তাহজুড়ে ভালোবাসার উদযাপন!
৭ ফেব্রুয়ারি রোজ ডে বা গোলাপ দিবস, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রপোজ ডে, ৯ ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে, বিশ্ব টেডি ডে ১০ ফেব্রুয়ারি, ১১ ফেব্রুয়ারি প্রমিস ডে, ১২ ফেব্রুয়ারি হাগ ডে বা আলিঙ্গন করার দিন, ১৩ তারিখ বিশ্ব চুম্বন দিবস বা কিস ডে পেরিয়ে ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আসে। এদিন ভালোবাসা উদযাপনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায়।
ভালোবাসা দিবস আর প্রকৃতির পালাবদলের বসন্ত একইসঙ্গে দোলা দিয়ে যায় আমাদের যাপনে। ফাগুনের দখিনা হাওয়ায় ভালোবাসার রঙে রঙিন হয় হৃদয়। শুধু তরুণ-তরুণীই নয়, সব বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ। এই ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি।
জোড়া উৎসব উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, শপিংমল, এমনকি সড়কেও ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের আমেজ। ছড়িয়ে পড়েছে ভালোবাসাময় বসন্তের রঙ। নানা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস পালনের।
ভালোবাসা দিবস ও ফাল্গুনকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশেপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। এদিন সকালে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য র্যালি, সূচনা সংগীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলা, রবীন্দ্র সরোবর, রমনাসহ বিভিন্ন জায়গায় বসন্তবরণের আয়োজন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় থাকছে সমগীতের বসন্ত উৎসব। সকাল নয়টা থেকে শুরু হবে এই উৎসব।
আজ ১ ফাল্গুন ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন থাকছে।
একাডেমি সূত্র জানায়, নব ফাল্গুনের এই বর্ণিল উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে সকল নারী দর্শকদের মাথায় ফুলের রিং ও পুরুষদের হাতে ফুলের মালা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপস্থিত দর্শদের মধ্যে সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মডেল শারমিন শিলা তার বন্ধুদের মিলে টিএসসিতে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। ‘বসন্তবরণে দ্বিতীয় অধ্যায়’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক আয়োজনটিতে মূলত লোকসংগীত ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় অধ্যায় গতবারের মতো এইবারও বসন্তকে বরণ করে নিতে টিএসসিতে চায়ের কাপে বাংলার মুখ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। যার পূর্ববতী সংস্করণ ছিল চায়ের কাপে রিকশাচিত্র- বলেন শারমিন শিলা।