ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির দায়ে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)সহ চারজনকে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এছাড়া, জাহিন স্পিনিং মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় পৃথকভাবে আরও চার বিনিয়োগকারীকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তে অভিযুক্তদের শেয়ার কারসাজিতে প্রমাণ পাওয়ায় বিএসইসি এই জরিমানা করেছে। যা আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
ডিএসইর তদন্তে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজি করে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে দেখা যায়, প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৫ টাকা ৬০ পয়সা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠানো হয়েছে। এতে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এর সহযোগীরা ৬টি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিরিজ লেনদেন করে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং মোহাম্মদ জাহিদুল আবেদীনের প্রত্যেকেরই দুটি করে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল প্রত্যেকের একটি করে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের সিএফও মোহাম্মদ জাহিদুল আবেদিনকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া, ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে এজি মাহমুদকে তিন কোটি টাকা, এসএম মোতাহারুল জামানকে ১৭ লাখ টাকা ও সাইফ উল্লাহকে ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এর সহযোগীরা ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪ কোটি ২০ লাখ কোটি টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন এবং ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আন-রিয়েলাইজড গেইন করেছেন।
এদিকে, এজি মাহমুদ, সাইফ উল্লাহ এবং তাদের সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার দামে প্রভাবিত করেছেন। তারা শেয়ারটির দাম বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন এবং আন-রিয়েলাইজড গেইন করেছেন ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
শেয়ারটির কারসাজিতে জড়িত হওয়ায় এজি মাহমুদকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
জাহিন স্পিনিং মিলসের শেয়ারেও কারসাজি করার প্রমাণ পেয়েছে ডিএসই। ডিএসইর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাইফ উল্লাহকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনের দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারটির দাম কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে। এই শেয়ার কারসাজিতে সাইফ উল্লাহর রিয়েলাইজড গেইন হয়েছে ১ কোটি টাকা।
অপর এক তদন্তে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জসিম উদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারীকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।
রাষ্ট্রায়ত্ত শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পেয়ে বিনিয়োগকারী শারমিন আক্তার লাভলীকে ২ লাখ টাকা ও নাসির উদ্দিনকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
০০০০০
শেয়ারবাজারে দেশি বিনিয়োগকারী বেড়েছে, কমেছে বিদেশি
গত এক মাসে দেশের শেয়ারবাজারে বেড়েছে বিনিয়োগকারীরার সংখ্যা। এসব নতুন বিনিয়োগকারীর মধ্যে যেমন পুরুষ বিনিয়োগকারী আছেন, তেমনি রয়েছেন নারী বিনিয়োগকারী। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এর মধ্যে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।
শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারী আসায় গত এক মাসে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। এর সবগুলোই দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব। দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়ার মধ্যেই গত এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে অর্ধশতাধিক।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের প্রথম কার্যদিবস বা ২ অক্টোবর বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮২টি, যা বেড়ে ৩ নভেম্বর দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৮টিতে। অর্থাৎ গত এক মাসে ৫ হাজার ৩৩৬টি বিও হিসাব বেড়েছে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৬টি। অক্টোবরের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৩০৫টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব ৪ হাজার ২০১টি বেড়েছে।
অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৪টি। অক্টোবরের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৭০টি। এ হিসাবে এক মাসে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে এক হাজার ৪টি।
গত এক মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ১৩১টি। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৬ হাজার ২৩৮টি। অক্টোবরের শুরতে এই সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১০৭টি।
এদিকে নারী, পুরুষ ও কোম্পানির বিও হিসাব বাড়লেও গত এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব রয়েছে ৬৩ হাজার ৪৩টি। অক্টোবরের শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ৬৩ হাজার ১১৩টি। অর্থাৎ গত এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৭০টি।
অপরদিকে, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭টি। অক্টোবরের শুরুতে ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬২টি বিও হিসাব ছিল। অর্থাৎ গত এক মাসে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ২৭৫টি।
০০০০০
করসেবা মাস
ভোগান্তি ছাড়াই রিটার্ন দাখিল
করদাতাদের রিটার্ন দাখিলসহ প্রয়োজনীয় সেবা দিতে চলছে করসেবা মাস। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে এসময় সেবা পাচ্ছেন করদাতারা। পাশাপাশি রয়েছে ই-রিটার্নসহ নানা পরামর্শ।
গত মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) থেকে শুরু হয় করসেবা মাস। উদ্বোধনের পর আজ রোববার (৬ নভেম্বর) ছয়দিন হয়েছে। তবে এখনও তেমন সাড়া দেখা যায়নি করদাতাদের।
কর কর্মকর্তারা বলছেন, নভেম্বরে করসেবাটি হয় মাসব্যাপী। প্রথম দিকে জনসমাগম কম হলেও মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে রিটার্ন জমা পড়বে বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের অন্য সময়ে রিটার্ন জমা হলে তখন নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় করদাতাকে। এক্ষেত্রে কোনো ভুল হলে করদাতাকে সংশোধনের জন্য বলা হয়, এতে হয় বাড়তি ভোগান্তি। আর নভেম্বরে এ করসেবা মাসটি মেলার মতো। এখানে রিটার্ন জমার সঙ্গে যে কোনো ধরনের তথ্যসেবা পান সাধারণ করদাতারা। কোনো ভুল থাকলেও তা সংশোধন করে দেন প্রতিটি বুথে কর্মরতরা। এতে করদাতাদেরও কাজটা সহজ হয়।
কর অঞ্চলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির আগে আয়কর মেলা হতো। তবে মহামারির কারণে মেলার পরিবর্তে কর অঞ্চলে নভেম্বর মাসের ১-৩০ তারিখ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। এবার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগও চালু রয়েছে। এনবিআরের হটলাইন নম্বরে (০৯৬১২৭১৭১৭১) ফোন করে ই-রিটার্ন সম্পর্কে পাওয়া যাচ্ছে পরামর্শ।
এছাড়া ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নতুন করদাতারা ইটিআইএন রেজিস্ট্রেশন এবং বর্তমান করদাতারা রি-রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন।
কনসালট্যান্সি ফার্মে কর্মরত শাখাওয়াত হোসেন। তিনি তার ক্লায়েন্টের রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন কর অঞ্চল-৪ এ। শাখাওয়াত বলেন, কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেওয়া হয়। কোনো ধরনের ভুল এড়াতেই তারা এটা করে থাকেন। আমি কয়েকটা রিটার্ন জমা দিয়েছি। এখন ফাঁকা পরিবেশে রিটার্ন জমা দিতে পেরেছি, ভালো লাগছে।
মনিরা নাসরিন নামে একজন বলেন, আমার আপা আজ রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন। আমি তার সঙ্গে এসেছি। আমার আসা মূলত কিছু পরামর্শের জন্য, সমাধানও হয়েছে। এখন যেহেতু ভিড় কম তাই রিটার্ন জমা দিয়ে দেবো।
এর আগে ১ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম রাজধানীর সেগুন বাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে করসেবা মাসের উদ্বোধন করেন।