যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য কোন দলের দিকে হেলে পড়বে, তা ঠিক করতে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছে দেশটির লাখ লাখ নাগরিক।
মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সব ও উচ্চকক্ষ সেনেটের এক তৃতীয়াংশ আসনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজ্যের গভর্নর পদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের মন জয়ে আলাদা আলাদা সমাবেশে নিজ নিজ দল ও পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে যুক্তিতর্ক হাজির করেছেন।
বেশিরভাগ জনমত জরিপের হিসাবে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে; তেমনটা হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদের বাকি দুই বছর ডেমোক্র্যাটদের চাহিদা অনুযায়ী আইন পাসে বাইডেনকে বেশ বেগ পেতে হবে।
ডেমোক্র্যাটরা এখন হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি খুব সামান্য ব্যবধানে হলেও কংগ্রেসের উভয় কক্ষেরই নিয়ন্ত্রক।
প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝপথে হওয়া এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাধারণত ক্ষমতাসীন দলগুলো গড়ে দুই ডজন বা এর কিছু বেশি আসন বিরোধীদের কাছে হারায়।
মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব বিষয়ক গণভোট হিসেবে দেখা হয়, তাই এটি বাইডেনের জনপ্রিয়তার একটি পরীক্ষা।
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে থাকা ওষুধের দাম কমানো, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে না এমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং মার্কিন অবকাঠামো পুনর্গঠনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করা সত্ত্বেও চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ অভিবাসন প্রত্যাশীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ ডেমোক্র্যাট এ প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা অনেকখানি কমিয়েছে।
এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বড় ধরনের ‘ধরা খেলে’ তা দলের ভেতরেই চলতি মাসে ৮০ বছরে পড়তে যাওয়া বাইডেনের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত হবে কিনা, সে সংক্রান্ত গুঞ্জনকে উস্কে দেবে।
বাইডেন সোমবার রাতে নিজ দলের প্রার্থী ওয়েস মুরের প্রচারে মেরিল্যান্ড গিয়েছিলেন । নির্বাচনে জিতলে মুর হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের তৃতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর।
“আজ আমরা বাঁক বদলের মুহূর্তের মুখোমুখি। আমাদের গণতন্ত্র যে ঝুঁকিতে তা আমরা হাড়ে হাড়ে জানি, এবং এটাই সেই সময়, যখন আপনারা গণতন্ত্রের সুরক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন,” ওয়াশিংটনের বাইরে একসময় কেবল কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জন্য বানানো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেন বাইডেন।
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের এক হিসাবে দেখা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে লড়া অর্ধেকের বেশি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের মতোই ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দিহান।
সেবারের নির্বাচনে বিস্তৃত জালিয়াতি হয়েছিল বলে প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রাক্কালে সাবেক এ প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানদের হয়ে শেষ সমাবেশটি করেছেন ওহাইওতে, সঙ্গে ছিলেন রিপাবলিকান সেনেট প্রার্থী জেডি ভান্স।
২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোরালো ইঙ্গিত দেওয়া ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, তিনি আগামী ১৫ নভেম্বর ফ্লোরিডার মার-আ-লগো থেকে ‘বড়সড় ঘোষণা’এক দেবেন।
“আমেরিকার ক্রমাবনতি ও পতনের পক্ষে যদি থাকেন আপনি, তাহলে অবশ্যই, অতি অবশ্যই আপনার উচিত উগ্র বাম, উন্মাদ লোকদের ভোট দেওয়া।
“আর আপনি যদি আমাদের দেশের পতন রোধ করতে চান, তাহলে কাল (মঙ্গলবার) রিপাবলিকানদের ভোট দিন,” সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে ট্রাম্পের দলকে কেবল ৫টি আসনের ভোটের ফল উল্টে দিলেই হবে; আর সেনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন তাদের যত আসন আছে তার চেয়ে মাত্র একটি আসন বেশি লাগবে।
নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর হিসাবে রিপাবলিকানরা এবারের নির্বাচনে ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের তুলনায় ১৫ থেকে ২৫ আসন বেশি পাবে।
উচ্চকক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও আভাস দিয়েছেন তারা। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নেভাদা ও আরিজোনার ভোটের ফলের ওপরই সেনেট কাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে, তা নির্ধারিত হবে।
প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেলে রিপাবলিকানরা ক্যাপিটলে দাঙ্গা নিয়ে গত বছর থেকে শুরু হওয়া ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে নামতে পারবে।
রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ বাইডেনকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে না, এমন কথা বলতেও রাজি হননি দলটির অন্যতম নেতা কেভিন ম্যাককার্থি।
রিপাবলিকানরা নির্বাচনে জিতলে ম্যাককার্থি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার হতে পারেন। নিম্নকক্ষের এ স্পিকার পদটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোর সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ।
ডেমোক্র্যাটরা যদি সেনেটের দখলও হারায় তাহলে আগামী দুই বছর বাইডেন বিচারক নিয়োগ, এমনকী প্রশাসনে নিজের পছন্দের লোক বসানোর ক্ষমতাও অনেকখানি হারাবেন।
ভোটের নির্ধারিত দিন মঙ্গলবার হলেও এরই মধ্যে ৪ কোটি ৩৫ লাখের বেশি মার্কিনি আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএস ইলেকশনস প্রজেক্ট।
কিছু কিছু রাজ্য নির্বাচনের দিনও ব্যালট পোস্ট করার সুযোগ রাখায় এবং পুনর্গণনার বিধান থাকায়, দুই পক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলে ভোটের ফল জানতে কয়েকদিন এমনকী কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।