রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। রবিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ সর্বোচ্চ সক্ষমতায় ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে কেন্দ্রটি। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে রামপালের মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে আবারও পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন লাইনে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার নাগাদ ইউনিটটি পূর্ণ সক্ষমতায় সর্বোচ্চ ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারে।’
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে বলেন, ‘পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দিকে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।’
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইএফপিসিএল। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। পরীক্ষামূলক উৎপাদন পর্যায় সম্পন্ন হলে আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।
এর আগে গত ১৫ আগস্ট কেন্দ্রটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। প্রায় এক মাস পর পুনরায় উৎপাদন শুরু হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপাল কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটে উৎপাদনের জন্য সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষ হওয়ার পর ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) সনদ পাওয়া বাকি। কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। অগ্রগতি সূচি অনুযায়ী, আগামী বছরের জুনে দ্বিতীয় ইউনিটে উৎপাদন শুরু হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় (মোট ১৩২০ মেগাওয়াট) উৎপাদন করলে দৈনিক প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পুড়বে। প্রথম ইউনিটটি পূর্ণ মাত্রায় চললে দৈনিক সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা আনা হচ্ছে। ৮০ লাখ টন কয়লা আমদানি করতে দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আসতে পারে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) সমান মালিকানা রয়েছে। কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে সমান ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্বে গঠিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল)। এর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল)।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১০ সালে পিডিবি ও এনটিপিসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্মাণ ঠিকাদারের কাজে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার)। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঠিকাদার এই ঋণ সংগ্রহ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী মৈত্রী কোম্পানির সঙ্গে ঋণদাতা ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ১৬০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি সই ও চুক্তিপত্র বিনিময় হয়।
চূড়ান্ত ঋণচুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার এই ঋণের সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেয়। এর আগে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ঢাকায় বিএইচইএল এবং বিআইএফপিসিএলের মধ্যে নির্মাণচুক্তি সই হয়।