রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন




ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা: প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ৮:৪৯ pm
Dhaka International Trade Fair DITF Banijjo Mela Banijjomela ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কুড়িল বিশ্বরোড ডিআইটিএফ বাণিজ্যমেলা
file pic

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার বাকি এখনো প্রায় অর্ধমাস। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারে এরই মধ্যে সাজ সাজ রব। এক্সিববিশন সেন্টার ‘এ’ ও ‘বি’-এর ভেতরে-বাইরের আঙিনায় শতাধিক স্টল নির্মাণের কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। কাঠ, বাঁশ, হার্ডবোর্ড দিয়ে বানানো হচ্ছে অস্থায়ী স্টল। স্টিল, ইট ও কংক্রিট দিয়ে বহুতল প্যাভিলিয়নের গাঁথুনির কাজও শেষ পর্যায়ে। দিন-রাত এক করে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা। ২৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই বুঝিয়ে দিতে হবে স্টল। এবার পরিবেশও গতবারের চেয়ে ভালো। কুড়িল থেকে পূর্বাচলে যাতায়াতের রাস্তার কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়া এবং স্টল বাড়ানোয় জমজমাট বাণিজ্যমেলার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী সেন্টারে বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর। গত বছরের দর্শনার্থী খরা কাটিয়ে এবার প্রথম দিন থেকেই মেলা জমিয়ে তুলতে চান ব্যবসায়ী ও আয়োজকরা। আগামী ১ জানুয়ারি মেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সাল থেকে যৌথ উদ্যোগে মেলা করেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। তবে গতবছর প্রথমবারের মতো পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্যমেলা।

ঢাকা থেকে মেলায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড। বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফুট মূল সড়ক ধরে পৌঁছাতে হয় পূর্বাচল। নির্মাণকাজ চলায় গতবছর দর্শনার্থীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দর্শনার্থীও ছিল তুলনামূলক কম। এবার সড়কের অবস্থা কিছুটা ভালো। এখন চলছে একাধিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ। গতবারের মতো দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চালু করা হবে বিআরটিসির স্পেশাল বাস সার্ভিস। মেলা সফল করতে প্রশাসন সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুডস্টল ও রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে থাকবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবারের মেলায় ১২টি দেশের তিন শতাধিকের বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, স্টলগুলোতে হার্ডবোর্ড কাটা ও বসানোর কাজ চলছে। এক্সিবিশন সেন্টার ‘এ’-তে বঙ্গবন্ধু স্টলের হার্ডবোর্ড বসছে। ২০ জন শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন। আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে লাইটিং ও রঙের কাজ শেষ হবে বলে জানান শ্রমিকরা।

এক্সিবিশন সেন্টার ‘বি’-তে ২০টির বেশি স্টল বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। যার প্রত্যেকটিই ২০ ফুট বাই ২০ ফুট। হার্ডবোর্ডের পাশাপাশি স্টেনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্টলগুলোর কাঠামো। দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের স্টলে কথা হয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রফিক হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। পুরো কাঠামোটা স্টিলের তৈরি। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে, রঙের কাজ শুরু হয়নি। আমাদের শ্রমিক আরও বাড়বে। ২৫ তারিখে মধ্যে হ্যান্ডওভার করবো।

সামান্য দূরে চলছে একটি বেডশিট প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণকাজ। এই স্টলের কাঠমিস্ত্রি শমরেশ শর্মা জানান, ডিজাইন দেখে মাপ নেওয়া ও কাঠ-হার্ডবোর্ড কাটা শুরু হয়েছে কেবল। আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে স্টল বুঝিয়ে দেবেন তারা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকরা এখানেই থাকছেন। রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন। কাজ শেষ করে যে যার বাসায় ফিরবেন।

এক্সিবিশন সেন্টারের বাইরে অধিকাংশই বড় স্টল ও প্যাভিলিয়ন। নির্মিত হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিটের গাঁথুনিতে। ভেতরের তুলনায় বাইরের স্টলগুলো কাজের অগ্রগতি ভালো। হার্ডবোর্ড ও বাঁশ দিয়ে তৈরি স্টলও আছে। কয়েকটি অস্থায়ী দ্বিতল প্যাভিনিয়নের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। বালু দিয়ে ভরাট ও ইট দিয়ে দেওয়াল তৈরির কাজ চলছে। কোথাও স্টিল দিয়ে প্যাভিলিয়নের পিলার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। স্টলগুলোর হার্ডবোর্ডের চাহিদা মেটাতে প্রাঙ্গণে বসেছে কিছু অস্থায়ী হার্ডবোর্ডের দোকান।

এক্সিবিশন সেন্টারের বাইরে খোলা মাঠে কথা হয় কাঠমিস্ত্রি আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। বাড্ডার জহিরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। এক দশক ধরে মেলার স্টল তৈরি করা এই শ্রমিক বলেন, আমরা ১০ জন কাজ করছি তিনটি স্টলের জন্য। সকাল ৯টায় কাজ শুরু হয়, শেষ হয় রাত ১১টায়। এর মধ্যে খাবারের বিরতি চলে। শ্রমিক আরও বাড়বে, আশা করি আগামী ২৮ তারিখের মধ্যে স্টলগুলোর কাজ শেষ করতে পারবো।

বেঙ্গল পলিমার প্যাভিলিয়নের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. এমরান জানান, বিগ প্যাভিলিয়ন দ্বিতীয় তলার নির্মাণকাজ চলছে। ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। শিগগির লাইটিং ও অন্যান্য কাজ শুরু হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্টল ভাড়া ও নির্মাণ খরচ বেড়েছে। তবে এবার ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিসর বাড়ানোয় প্রথম দিন থেকে মেলা জমার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এক্সিবিশন সেন্টার ‘বি’-তে লেডিস ফ্যাশন স্টল তৈরির কাজ ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন এর স্বত্বাধিকারী সুজন আহসান।

তিনি বলেন, এবার মেলার পরিবেশ ভালো। মানুষ সহজেই আসতে পারবে। ধারণা করছি এবার ভালো ব্যবসা হবে। এবার স্টল ফি বেশি, আবার মেকিং খরচও বেশি। আমরা চেষ্টা করছি যত কম টাকা খরচ করে ভালো স্টল করা যায়।

তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের বিষয়টি মাথায় আছে আমাদের। তবে মেলায় মানুষ আসে নতুন কিছু দেখতে-কিনতে। সেক্ষেত্রে ভালো পণ্য হলে তারা বেশি দাম দিয়েও কিনবে।

ইরানি ফাইবারের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, গতবারও মেলায় ছিলাম। প্রথমে ভালো না হলেও শেষের দিকে মেলা জমেছে। এবার যেহেতু স্টল বেশি, আবার রাস্তাও ভালো হয়েছে, মেলা এবার প্রথম থেকেই জমে উঠবে।

সার্বিক বিষয়ে ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্টলগুলোর নির্মাণকাজ ৩০ ডিসেম্বরের আগে শেষ হবে। গতবার শিশুপার্ক ছিল না। এবার মিনি শিশুপার্ক থাকছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে। পরিবেশও ভালো হয়েছে। পরিসর বড় হয়েছে। গতবার ছিল ২২৫টি স্টল। এবার স্টল হবে ৩৩১টি। গতবারের তুলনায় এবারের মেলাটা আরও বেশি জমজমাট হবে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD