লাল বলে, সাদা পোশাকে স্বপ্নের মতো দিন কাটাতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ফিল্ডারদের ‘পিচ্ছিল’ হাতে দিনটি পুরোপুরি আলো ঝলমলে হয়নি। দুই দফা জীবন পেয়ে ঋষভ পান্তকে সঙ্গে নিয়ে ১৫৯ রানের বিশাল জুটি গড়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার। এই জুটিই মূলত সফরকারীদের লিড নিতে ভূমিকা রেখেছে। মিরাজ কিংবা নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ নিতে পারলে এত লম্বা জুটিও হয় না। আর বাংলাদেশও দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে পারতো এগিয়ে থেকেই। তবু স্বস্তির খবর ভারতের ৮৭ রানের লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ বিকালটুকু অনায়াসেই পার করেছে স্বাগতিক দল। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে এমন স্বস্তির দিন খুব কমই এসেছে!
শেষ ব্যাটার হিসেবে মোহাম্মদ সিরাজ আউট হতেই ভারতের লিড দাঁড়ায় ৮৭ রানের। নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসানের সামনে তখন শেষ বিকালে অবিচ্ছিন্ন থাকার চ্যালেঞ্জ। আলোর স্বল্পতায় ২ ওভার কম খেলা হলেও নির্ধারিত ৬ ওভারে ৭ রান তুলে অনায়াসেই দ্বিতীয় দিন পার করতে পেরেছে। শনিবার তৃতীয় দিন প্রথম সেশনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারলেই ঢাকা টেস্টে চালকের আসনে বসে যেতে পারবে স্বাগতিকরা। শান্ত ৫ ও জাকির ২ রান নিয়ে তৃতীয় দিন সকালে ব্যাটিংয়ে নামবেন।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা ছিল বাংলাদেশেরই। তাইজুলের ৩ উইকেট শিকারে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে রাখতে পেরেছিল তারা। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে বিরাট কোহলির উইকেট নিতে পারলেও সাফল্য বলতে ছিল এই একটিই। স্বাগতিকদের ফিল্ডিং ব্যর্থতায় ভারতীয় দল ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পরে তো ঋষভ পান্ত-শ্রেয়াস আইয়ারের দৃঢ়তায় লিড নেওয়ার মতো অবস্থায় যেতে পেরেছে। অথচ ১৯ ও ২১ রানে দুইবার জীবন পেয়েছিলেন ভারতীয় এই ব্যাটার। একবার মিরাজের কল্যাণে, আরেকবার সহজ স্টাম্পিং মিস করে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন সোহান। তার পরেই শ্রেয়াস খেলেছেন ৮৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। পান্তকে ফিরিয়ে মিরাজ ব্রেক থ্রু এনে না দিলে স্বাগতিকদের ভয়ংকর পরিস্থিতিতেই পড়তে হতো। ১৫৯ রানের অসাধারণ জুটিটি ভেঙে তাদের লিড বেশি বাড়তে দেননি এই অফস্পিনার।
১৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনারের ২৭ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। লোকেশ রাহুলকে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৫ বলে ১ চারে ১০ রান করেছেন। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেও ফের আঘাত হানেন তাইজুল। ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল তার বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলে-ব্যাটে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি। এলবিডব্লিউতে ১ ছক্কা ও ১ চারে ২০ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন।
৩৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারার জুটিকেও তাইজুল বেশি দূর যেতে দেননি।পূজারাকে ফিরিয়ে ৩৪ রানের এই জুটি ভেঙে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিতে অবদান রেখেছেন। ফেরার আগে ৫৫ বলে ২ চারে ২৪ রানের ইনিংস খেলেছেন চট্টগ্রাম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান।
লাঞ্চের আগে বিরাট কোহলিকেও ফেরানো যেত! তবে কঠিন ছিল সেই ক্যাচ। তখন তিনি ১৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন। তবে লাঞ্চ বিরতির পর তাকে ফিরিয়ে ঠিকই সাফল্যের দেখা পেয়েছেন তাসকিন। প্রথম ওভার করতে এসেই বিরাট কোহলিকে বিদায় দিয়েছেন। যা আবার এই পেসারের ঘরের মাঠে প্রথম টেস্ট। কোহলি ৭৩ বলে করেছেন ২৪ রান।
৯৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরই ইনিংসের মূল প্রতিরোধ গড়েছেন পান্ত-আইয়ার। দ্বিতীয় সেশনের বাকিটা সময় রাজত্ব করেছেন। অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডিং ব্যর্থতাও এর জন্য দায়ী। দুইবার জীবন পেয়েছেন আইয়ার। চায়ের বিরতি থেকে ফেরার পর দ্রুতগতিতে রানও তুলতে থাকেন তারা। পঞ্চম উইকেটের এই জুটিতে সফরকারী দল লিড নিতে পেরেছে। পান্ত তো সেঞ্চুরির কাছেই ছিলেন। কিন্তু ৯৩ রানে ব্যাট করতে থাকা এই ব্যাটারকে দারুণ এক ডেলিভারিতে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন মিরাজ। উইকেটকিপার ব্যাটারের ইনিংসটি ছিল ১০৪ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় সাজানো। তাতে ভাঙে ১৫৯ রানের অসাধারণ একটি জুটি।
এই জুটি ভাঙার পর নতুন ব্যাটার অক্ষর প্যাটেল ফিরলে স্থায়ী হয়নি শ্রেয়াস আইয়ারের প্রতিরোধও। এই উইকেট তুলে ফেলাতেই ভারতকে দ্রুত গুটিয়ে ফেলার পথটা সহজ হয়েছে। ৮৭ রান করা আইয়ারকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন সাকিব আল হাসান। আইয়ারের ১০৫ বলের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ২টি ছয়ের মার।
তারপর অশ্বিন (১২), উমেশ (১৪), সিরাজ (৭) শেষটায় ছোট ছোট ইনিংস খেলে স্কোরবোর্ডটা তিনশ’ ছাড়াতে ভূমিকা রাখলেও দ্রুত লেজ ছেঁটে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারতের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৩১৪ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সমান ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। সাকিব ৭৯ রান খরচ করেছেন। তাইজুল দিয়েছেন ৭৪ রান। একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনের পুরোটা সময় অস্বস্তি নিয়ে কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার জেরে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রান সংগ্রহ করতে পারে। মুমিনুল হক ছাড়া কোনও ব্যাটারই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
দ্বিতীয় দিনশেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৩.৫ ওভারে ২২৭ (মুমিনুল ৮৪, মুশফিক ২৬, লিটন ২৫, শান্ত ২৪; উমেশ ৪/২৫, অশ্বিন ৪/৭১, উনাদকাট ২/৫০)।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৮৬.৩ ওভারে ৩১৪ (পান্ত ৯৩, আইয়ার ৮৭; তাইজুল ৪/৭৪, সাকিব ৪/৭৯), বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ ওভারে ৭/০ (শান্ত ৫*, জাকির ২*)।