রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। তাই রোববার দুপুরের পর থেকে পাড়া-মহল্লায় শেষবারের মতো মিছিল-শোডাউন করেছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। তবে অভিযোগ উঠেছে মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালালেও, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীরা তা মানছেন না।
এদিকে, রংপুর সিটির ভোট ২০১৭ সালের মতোই উৎসবের হবে এমনটাই আশা করছেন নগরবাসী। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে, যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিকাল ৩টার পর অধিকাংশ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল ও শোডাউন করছেন।
ঘুড়ি প্রতীকের সমর্থক আব্দুল হাদী বলেন, ‘আজকের পর তো আর মিছিল করতে পারবো না, তাই মিছিল নিয়ে বের হইছি। একবার পুলিশ আসছিল, পরে তারা চলে গেছে। এখন মিছিল করতেছি।’
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের সমর্থক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা পাড়ায় মিছিল করছি। মূল রাস্তায় যাইনি। সবাই মিছিল বের করছে তাই আমরাও করছি। তবে, সরেজমিনে দেখা গেছে এসব মিছিলের সামনে প্রার্থীরা ছিলেন না।
নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী নির্দেশনাটি সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক এবং রংপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, নির্বাচনি এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে হবে।
এদিকে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে রোববার মধ্যরাতেই মাঠে নেমেছে র্যাব পুলিশ এবং বিজিবি। পাশাপাশি রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এবার সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ ৯ প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে প্রশাসন। এসব কেন্দ্রের এক হাজার ৩৪৯টি বুথে এক হাজার ৫৭৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এছাড়া রাত থেকে ১১ প্লাটুন বিজিবি, ১৭ প্লাটুন র্যাব ও ৩৩ প্লাটুন পুলিশ সদস্য ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছে।
এছাড়া মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন ৩৩ জন নির্বাহী ও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘একটি উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম-কারচুপি হোক এটা আমরা এমনকি রংপুরবাসীও চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের নির্বাচন ছিল একটা দৃষ্টান্ত। এবারও আমরা ওই ধরনের নির্বাচন চাই।’
সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর কোনো প্রার্থী বা কর্মী-সমর্থক আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালাতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে ১১ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। যেহেতু ইভিএম এ ভোট গ্রহণ হবে তাই দ্বিগুণ ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ইভিএম’র সমস্যা হলে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’