মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:২৫ অপরাহ্ন




শীতের তীব্রতায় জবুথবু দেশ, ভোগান্তি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ৪:১৯ pm
cool আবহাওয়া তাপমাত্রা পূর্বাভাস কুয়াশা লঘুচাপ বঙ্গোপসাগর সেলসিয়াস tem Weather আবহাওয়া Rain বৃষ্টি Cold wave শৈত্যপ্রবাহ শৈত্য প্রবাহ Climate Change Conference COP27 winter season temperate climate polar autumn coldest Cold পৌষ মাঘ শীতকাল তাপমাত্রা ঋতু হিমেল হাওয়া হাড় কাঁপুনি সর্দিজ্বর ঠান্ডা Cold wave
file pic

শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের এই তীব্রতা। একই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া, সঙ্গে কুয়াশার দাপট। এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদিকে ফুটপাত ও বস্তিতে বসবাসকারী নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেড়ে গেছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণ।

আবহাওয়া অধিদফতর কী বলছে

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

তারা জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

ভোগান্তি

রামপুরায় বসবাস করা কাজী মিলি বলেন, ‘নিজের গরম কাপড় পরে কাজে বের হয়ে তো যাচ্ছি। বাসায় কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। ঘরগুলো সব বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। এলাকার অনেকেই গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখার চেষ্টা করছে, আবার অনেকেই রুম হিটার দিয়ে শীত নিবারণ করছে।’

মগবাজারের দরজি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘কুয়াশা আর শীতের কারণে সকালে কেউই কাজে আসতে চাচ্ছে না। দোকানেও আর হিটার বসানো যাচ্ছে না। কর্মচারীদের ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছে। ঘন ঘন চা খেয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছি।’

আবহাওয়াবিদ কী বলছেন

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, রাতের তাপমাত্রা কমলে সাধারণ মানুষ বাসায় থাকার কারণে শীতের তীব্রতার প্রকোপ এতটা অনুভব করে না। কিন্তু দিনের বেলা তাপমাত্রা কমলে মানুষ কাজে যাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভব করছে। গত দুদিন কুয়াশার কারণে সূর্য না ওঠায় দিনের তাপমাত্রা হুট করেই অনেকটা কমে গেছে। তবে রাতের তাপমাত্রা আগের মতোই আছে। ফলে রাত ও দিনের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন এই আবহাওয়া থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

হাসপাতালের অবস্থা

দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শীতের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

নীলফামারী, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, নীলফামারী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বেশি। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি বলেন, ‘শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

কুড়িগ্রামেও শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ‌্যা। শয্যা-সংকটে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। প্রায় একই অবস্থা দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ হাসপাতালের।

নিম্নবিত্তদের কষ্ট

ঢাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতে, বস্তিতে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে নিম্নবিত্তদের। বাসাবাড়িতে কাজ করা মনোয়ারা জানান, রাতে পলিথিনের ঘর, টিনের ফুটো দিয়ে হিমেল বাতাস ঢুকে যায়। ঘর হয়ে থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। এই অবসস্থায় সকালে উঠে কাজে আসতেও কষ্ট হয়। এদিকে কাজে এসেই প্রায় সারা দিনই ঠান্ডা পানিতেই কাজ করতে হচ্ছে। শীতের একই ধরনের কষ্টের কথা বলেন রিকশাচালক শহিদুল। তিনি বলেন, হাত-পা জমে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারছি না। সন্ধ্যার দিকে পাতা, কাগজ কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত কাটানোর চেষ্টা করছি।

হকারদের রমরমা ব্যবসা

রাজধানীর পুরানা পল্টন, গুলিস্তান আর বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে দেখা যায় অন্য এক চিত্র। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম কাপড় কেনার হিরিক পড়ে গেছে। একই সঙ্গে সুযোগ বুঝে দামও বাড়িয়ে দিয়েছে হকাররা। অভিযোগ করছেন অনেক ক্রেতাই।

কাপড় কিনতে আসা হালিমা খাতুন বলেন, হুট করেই এবার শীতটা বেড়ে গেছে। আগের মতো আর অবস্থা নেই। গরম কাপড় কম ছিল, তাই নতুন কিছু কাপড় কিনতে হচ্ছে। এদিকে কাপড় কিনতে এসে দেখি আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি চাইছে। একই অভিযোগ করেন মাহমুদ আলম। তিনি আরও বলেন, সংসার বড়। অল্পেই চালাই। অন্য খরচ বেড়েছে। তাই এবার গরম কাপড় তেমন একটা কিনিনি। এখন শীত বাড়ায় বাধ্য হয়েই কাপড় কিনতে হচ্ছে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD