অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণে গোপনেই শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। ডায়াবেটিসও এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগ বেশ পরিচিতি হলেও কেউ খাবারের নিয়ন্ত্রণ মানেন। আবার কেউ মানেন না। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে নিয়ে ওষুধ খেয়ে থাকেন অনেকে। তারা বলেন খাবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। বাড়াবাড়ি হলে নিতে হয় ইনসুলিন। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তখন, যখন রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখা দরকার। দুই ধরনের ডায়াবেটিস আছে – টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করে না, অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় খুব কম পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করে। ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে ডায়াবেটিস রোগীদের ভাত খেতে নিষেধ করা হয়, কারণ এতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যা রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়।
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গরম ভাত খাওয়ার পরিবর্তে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ঠান্ডা ভাত খান, তাহলে তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গবেষণা চলাকালীন, রোগীদের দুটি ভিন্ন ধরণের খাবার দেওয়া হয়েছিল। খাবারের আগে গবেষকরা এই সব রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা মেপে নেন। রোগীদের প্রথমে লম্বা দানা সাদা চালের গরম ভাত খেতে দেওয়া হয়েছিল। আর পরের দিন আগের দিনের গরম ভাত ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে আবার গরম করে রোগীদের খেতে দেওয়া হয়।
গবেষকরা দেখেছেন যে রোগীরা যখন ঠান্ডা ভাত খেয়েছিলেন, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ছিল। গরম রান্না করা ভাত খাওয়ানোর পরই তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়তে দেখা যায়। গবেষণা শেষে জানা গিয়েছে, খাবারে ভাতের মতো কুল কার্বোহাইড্রেট অন্তর্ভুক্ত করে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে গরম ভাতের তুলনায় ঠান্ডা ভাতে প্রতিরোধী স্টার্চ বেশি পাওয়া যায়। প্রতিরোধী স্টার্চ হজম হতে অনেক সময় নেয়। ফলস্বরূপ, ফাইবারের মতো প্রতিরোধী স্টার্চ রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডা ভাত খাওয়া শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যই উপকারী নয়, এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখা, এনার্জি লেভেল পড়ে যাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করা এবং ওজন কমাতে সাহায্য করা ইত্যাদি। যদি ওজন কমাতে চান এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে প্রতিরোধী স্টার্চ আপনার জন্য খুব উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।