রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন




যশোরের আইটি পার্কে হোটেল খোলায় উদ্বিগ্ন উদ্যোক্তারা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৩ ৪:২৩ pm
sheikh hasina software technology park in jashore যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক যশোর আইটি পার্ক
file pic

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের বিকাশ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায়ই সেই লক্ষ্য পথ হারিয়েছে।

২৬ জানুয়ারি পার্কটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পার্কে একটি তিন তারকা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট চালু করে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ আইটি পার্কের ব্যবসার পরিবেশকে নষ্ট করবে; উদ্যোক্তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হবেন।

আইটি পার্কের এক উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এখানে আইটি ব্যবসার জন্য এসেছি। এখানে শুধু আইটির লোকদেরই থাকতে দেওয়া উচিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট খুলছে। এখন উদ্যোক্তাদের পার্ক ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”

“টেকসিটি তৃতীয়পক্ষ হিসেবে পার্কটি পরিচালনা করছে। এখানে কে থাকলো বা থাকলো না, সেটি নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। সরকার যদি পার্কটির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেয়, তাহলে যে উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হবে,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে টেকসিটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খান প্রপার্টিজের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আইসিটি পার্কের ডরমিটরিটিকে হোটেল এবং রিসোর্টে রূপান্তরিত করেছেন। আইসিটি পার্ক প্রাঙ্গণে লেকের পাশে রিসোর্টের একটি অংশ নির্মাণ করা হবে।

টেকসিটির সিইও হারুন উর রশিদ বলেন, “আমরা পার্কটিকে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও উপযোগী করে তুলতে হোটেল এবং রিসোর্ট নির্মাণ করছি।”

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, “আমরা এই পার্কে একটি চমৎকার রিসোর্ট করতে চাই। এখানকার লেকটির সৌন্দর্য আরও বাড়ানো হবে। লেকে স্পিড বোটও থাকবে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এতে বিনিয়োগকারী ও দর্শনার্থী উভয়ই লাভবান হবেন।”

এদিকে, আইসিটি পার্কে হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে লক্ষ্যচ্যুত করবে।

অ্যাভো টেকনোলজির সিইও খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, “দেশের অনেক বিনিয়োগকারী এই পার্কে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন। এটি তাদের জন্য খারাপ খবর। এটি দেশের প্রথম সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক। এই পার্ক যদি হোটেল এবং রিসোর্টে পরিণত হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই বড় ভুল হবে।”

আইসিটি পার্ক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “আইসিটি পার্কটি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে, এটি খুবই দুঃখজনক। এখানে হোটেল এবং রিসোর্ট চালু করাও গ্রহণযোগ্য নয়।”

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নামানুসারে এটি দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এটি আইসিটি পার্ক হিসেবেই থাকা উচিত।”

এদিকে, পার্ক কর্তৃপক্ষ এখন আইসিটি উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেয়ে বিয়ে, জন্মদিনসহ নানান সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বেশি ব্যস্ত বলেই অভিযোগ রয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা পার্ক ছেড়ে চলে গেছেন এবং যারা এখনো আছেন, তারাও টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উদ্যোক্তা বলেন, “পার্কের ক্যাফেটেরিয়ায় একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় প্রযুক্তি-সম্পর্কিত সেমিনারের চেয়ে বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।”

সূত্র জানায়, পার্কটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই পার্ক প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল এটি। একটি মাত্র বিদেশি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করেছিল। তবে গতবছর সেই কোম্পানিও পার্ক ছেড়ে চলে গেছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টি কোম্পানির মধ্যে ২২টি ইতোমধ্যেই পার্কে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি ১১টি কোম্পানির বেশিরভাগই এখন টিকে থাকতে লড়াই করছে।

টেকসিটির কর্মকর্তারা জানান, ৫৫টি কোম্পানির জন্য আইসিটি পার্কে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে; এরমধ্যে বর্তমানে ৪৮টি কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এরমধ্যে মাত্র ৯টি কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। অন্যান্য কোম্পানিগুলো ই-কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবা, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদির মতো ব্যবসা পরিচালনা করে।

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, তারা প্রথমে পার্কে জায়গা বরাদ্দের জন্য বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। কিন্তু পার্কটি যে তৃতীয়পক্ষ পরিচালনা করবে, তা উল্লেখ ছিল না সেই চুক্তিতে।

সূত্র জানায়, পার্কের আয়ের মাত্র ১৮ শতাংশ সরকার এবং বাকি প্রায় ৮২ শতাংশই পাচ্ছে টেকসিটি। বর্তমানে এই কোম্পানি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট ১৭.২৬ টাকা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিল নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। টেকসিটি প্রতি ইউনিটের জন্য বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে ১৪ টাকা, যেখানে সরকার নির্ধারিত দাম ইউনিট প্রতি ১০ টাকা।

পার্কের বিনিয়োগকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল বলেন, “শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ভাড়া তুলনামূলক বেশি। বিদ্যুৎ বিলও অনেক বেশি। এই বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করেছি। তারা বলছে, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তারা।” [দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD