বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২২ পূর্বাহ্ন




ভিকারুননিসার শিক্ষিকাকে ছাত্রীর চিঠি

ভিকারুননিসার শিক্ষিকাকে ছাত্রীর চিঠি: আর জড়িয়ে ধরবেন না লাকী আপা!

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ৯:১১ pm
Viqarunnisa Noon School College institute Baily Road ভিকারুননিসা নুন স্কুল কলেজ ঢাকা বেইলি রোড ভিকারুননিসা
file pic

যানজটের কারণে ঢাকায় কর্মস্থল থেকে কাছাকাছি বাসায় থাকতে চায় সবাই। ভিকারুননিসা মূল প্রভাতী শাখার সিনিয়র শিক্ষক লুৎফুন্নাহার করিম লাকী তেমনই পাশের সার্কিট হাউস রোডে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকতেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুন এক নিমিষে লাকীর সাজানো সংসারের সেই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নেয়। সেদিনের সেই আগুনে লাকী ও তার মেয়ে নিকিতাসহ ৪৬ জন নিহত হন।

বৃহস্পতিবার সার্কিট হাউস রোডের বাসায় কথা হয় শিক্ষক লাকীর স্বামী এম এ এইচ গোলাম মহিউদ্দিন খোকনের সঙ্গে। হাসি-আনন্দে মুখর প্রাণচঞ্চল শিক্ষকের বাসায় শুনশান নিরবতা। মহিউদ্দিন খোকন কথার ফাঁকে জানালেন, ভিকারুননিসার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী কদিন আগে তার প্রিয় শিক্ষকের উদ্দেশে হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়েছে।

তিন পৃষ্ঠার আবেগঘন চিঠিতে ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‌’আমার প্রিয় লাকী আপা। আশা করছি, আমাদের ছেড়ে ভাল আছেন। মায়ের মতো করে আমাদের ভালবাসতেন। অনেক কিছু বলার ছিল, বলতে পারিনি। সিনিয়রে যখন এসেছি, সবাই অচেনা। কোনো আপার সঙ্গে পরিচয় নেই। সেই সময় আপনাকে পেয়েছি কাছের বন্ধুর মতো। এইটের ক্লাস পার্টিতে আপনার সঙ্গে ছবি তুলব, গান করব, নাচব- কতকিছু ভেবে রেখেছিলাম। সেইসব আজকে শুধু ভাবনাই রয়ে গেল। আপনি আর জড়িয়ে ধরবেন না আপা। কত মানুষই তো চোখের নিচে কাজল পরে, আপনার কাজল পরা ছাড়া আর কারওটা ভাল লাগত না। সেই মায়া আপনার চোখে।’

ছাত্রীদের ব্যবসায় অধ্যয়ন পড়াতেন লুৎফুন্নাহার করিম লাকী। ব্যবসা করতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজে কিছু করতে হবে- এমন অনুপ্রেরণাও দিতেন সবাইকে। ওই ছাত্রী লিখেছেন, ‌’আপনার সুপ্ত ব্যবসা করার বাসনাটি আমি পূরণ করতে চাই। বিজনেস ইন্টারভিউতে গিয়ে আমি বলব, আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার লাকী আপা। আপনি হয়তো নেই, কিন্তু সবসময় আপনি আমাদের মাঝে থাকবেন। আপনার ভালবাসা, আপনার দোয়া সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

শিক্ষক পরিবারের জন্য শিক্ষার্থীর এমন অকৃত্রিম ভালবাসা যে কতটা সম্মানের, তা চিঠি পড়তে পড়তে মহিউদ্দিন খোকনের চোখের জলই বলে দিচ্ছে।

ঘটনার সময় কীভাবে খবর পেলেন- জানতে চাওয়া হলে মহিউদ্দিন বলেন, এখন সেসব বলে কী আর হবে। তবে পত্র-পত্রিকায় একটু অন্যভাবে লেখা হয়েছে। বাসায় দুজন একসঙ্গে মাগরিবের নামাজ পড়ার পর একা শান্তিনগর পপুলারে দাঁতের চিকিৎকের কাছে যায় লাকী। ছেলে সাদমান সাকিব তখন বেইলি রোডের রসের গলিতে বন্ধুর বাসায় পড়তে গেছে। পরদিন ওর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এরপর ছেলে-মেয়েসহ আমাদের সবার ওই রাতে সেগুনবাগিচায় ওদের নানুর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ আমাকে ও (লাকী) ফোন করে বলল বেইলি রোডের মিস্টার বেকারের এখানে আগুন লাগছে, তাড়াতাড়ি আসো। আমি বের হতে হতে ছেলেকে ফোন করলাম, ও বন্ধুর বাসা থেকে বেরিয়ে ওখানেই ছিল তখন। মি. বেকারে ঢুকে ও কিছু দেখতে পায়নি। সঙ্গে সঙ্গে সে আগুন লাগা ভবনের নিচে যায়। রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে সর্বশেষ কথা হয়, এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি মা-মেয়েকে। সন্ধ্যা ৬টায় মেয়ের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শেষ হয়। ক্লাস থেকে ফিরে মেয়ে ঠিক কখন মায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তা এখন আর জানার কোনো উপায় নেই।[সমকাল]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD