ভারতে উচ্চশিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে গরিবদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখার বিতর্কিত আইনের পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে আগে থেকেই জাতিগত কারণে সামাজিকভাবে সুবিধা বঞ্চিত বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং আদিবাসীদের জন্য ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে।
তার সঙ্গে এখন গরিবদের জন্য আরও ১০ শতাংশ কোটা যোগ হল। আর্থিকভাবে দুর্বল কিন্তু উচ্চবর্ণের মানুষরাও এই কোটা পাওয়ার যোগ্য।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনী এনে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল শ্রেণির জন্য সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়।
সংশোধনীতে বলা হয়, যে প্রার্থীদের পরিবার কর দেওয়ার উপযোগী নয়, অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় ৮ লাখ রুপির কম, তাদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে।
কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী দলগুলো নরেন্দ্র মোদী সরকারের এ আইনের বিরোধিতা না করলেও তামিলনাড়ু রাজ্যসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন থেকে মোদী সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
আদালতে করা আর্জিতে তারা জানায়, ভারতের সংবিধানে ‘একটি সমতাবাদী ও বর্ণবৈষম্যহীন সমাজ গঠনের যে সাংবিধানিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে এই আইন সেই লক্ষ্যের প্রতি অবমাননা’।
এছাড়া, ১৯৯২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে, নতুন আইন তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
নতুন করে ১০ শতাংশ কোটা যুক্ত হওয়ায় ভারতে এখন মোট কোটা ৫৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
ভারতে জাত-পাত ও বর্ণ বৈষম্য সমাজের অনেক গভীরে প্রোথিত। দেশটির সমাজ ব্যবস্থায় যুগের পর যুগ ধরে নিম্নবর্ণের মানুষেরা নানাভাবে শোষিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে।
ঐতিহাসিক ওই অন্যায় সংশোধন এবং ঐতিহ্যগতভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সমান সুযোগ করে দিতে ১৯৫০ সালে ভারতে প্রথম উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল, ১০ বছর পর ওই কোটা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু তারপর বহু বছর পেরিয়ে গেলেও কোটা আর তুলে নেওয়া হয়নি। বরং কোটার মেয়াদ বাড়াতে বার বার আইন সংশোধন করা হয়েছে।
১৯৮৯ সালে ওবিসিএস(আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস) দেরও কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যারা ঐতিহ্যগতভাবে উচ্চবর্ণ এবং নিম্নবর্ণের মধ্যে পড়ে।
নতুন করে আরও ১০ শতাংশ কোটা বাড়ানোর পক্ষে মোদী সরকারের ব্যাখ্যা হল, সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের স্বার্থ রক্ষা করা এবং মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা তাদের কর্তব্য।
সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দরিদ্রদের জন্য কোটার পক্ষে রায় দেয় বলে জানায় বিবিসি। প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এই রায় দেন।
প্রধান বিচারপতি ললিত ও বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট কোটার বিরুদ্ধে মত দিলেও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জে জে পর্দিওয়ালা কোটার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, সরকারি এই সিদ্ধান্ত ভারতের সংবিধান পরিপন্থি নয় এবং এটিকে সরকারের ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।