মানুষ মুনাফা পাওয়ার আশায় ব্যাংকে টাকা রাখে। দিন দিন আমানতে মুনাফার পরিমাণ কমছে। বর্তমানে ব্যাংকে টাকা রাখলে আমানতও কমছে। দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ৪ শতাংশের নিচে সুদ দিয়েছে ২৫ ব্যাংক। ব্যাংকে টাকা রেখে যে সুদ পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাড়তি মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে অনেক মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
দেশে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। মানুষ বেশি সঞ্চয় করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমছে।
বর্তমানে ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ মিলছে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে কিছু দুর্বল ব্যাংক বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ বাড়াতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে রিয়াদুল আহমেদ বেশ হতাশা নিয়েই বলেন, একটি ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা আমানত রেখেছিলাম। আগে চাকরির বেতনের পাশাপাশি এখান থেকে যে সুদ পাওয়া যেতো তা দিয়ে খুব ভালোভাবে চলা যেতো। তবে এখন ব্যাংক থেকে অনেক কম সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এতে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ২৫টি ব্যাংক আমানতে ৪ শতাংশের নিচে সুদ দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো: রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বিদেশি স্টান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক, ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সাইক্লোন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ওয়ারি ব্যাংক, দ্যা হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন এবং ব্যাংক আল-ফালাহ লিমিটেড। এছাড়াও রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, সীমান্ত ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমানতে কম সুদ দেওয়ার বিষয়টি শুনতে পেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী পরিদর্শন দল ও সুপারভিশন বিভাগ এবিষয়ে কাজ করবে। কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে শিগগিরই তা সমাধান করা হবে।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর আগের মাসে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তুলনা করলে ব্যাংকে আমানত রাখলে বর্তমানে ৫ শতাংশ টাকা কমে যাচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রথম ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়। এতে আমানতের সুদ কমে ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপরে গত ২০২১ সালের আগস্টে মেয়াদি আমানতের সুদ দেশের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না বলে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ব্যাংক আমানতের সুদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানতে পারছে না।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরে সব ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
একদিকে মূল্যস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে আমানতে কম সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংক খাতে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমছে।
অপরদিকে আমানতের সুদ হার নিয়ে হতাশা বাড়ছে। বর্তমানে এই খাতটির সুদ হার দিয়ে মূল্যস্ফীতির ঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো নির্দিষ্ট মাসে সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই মাসের তিন মাস আগের মূল্যস্ফীতির হারকে বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মূল্যস্ফীতির চাপে অনেক ব্যাংকই এই নির্দেশনা মানছে না।