ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে মারা যান রাষ্ট্রায়ত্ত পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক কর্মকর্তা মনির আহমদ (৬৫)। তার মৃত্যুর পর পেনশনের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ছেলেমেয়েরা। বাবার লাশ আটকে রেখে নিজেদের হিস্যা বুঝে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। তবে সমাধান না হওয়ায় লাশবাহী ফ্রিজারে পড়ে ছিল লাশ। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর ৪০ ঘণ্টা পর স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে এই হতভাগা বাবার লাশ দাফন করা হয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপেরবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনির আহমদের অবসরের টাকার ভাগ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দুই ছেলের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে থাকা তিন মেয়ের বিরোধ চলছিল। বিশেষ করে মেজো বোন বেবি আকতারের ওর ক্ষুব্ধ ছিল দুই ভাই। তাদের দাবি, বেবি আক্তার অসুস্থ বাবাকে ভুল বুঝিয়ে তার পেনশনের ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরমধ্যে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ। মারা যাওয়ার পর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্সে করে তার লাশ আনা হয় গ্রামের বাড়িতে।
রোববার সকালে পাশের মসজিদে জানাজা হওয়ার কথাও ছিল। তবে মনির আহমদের দেশে ও বিদেশে থাকা দুই ছেলের চাপে জানাজার আয়োজন করা যায়নি। তাদের দাবি, বাবার পেনশনের হিস্যা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত তারা দাফন করতে দেবেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেক চেষ্টা করেও ছেলেদের বুঝাতে পারেননি।
মৃত মনির আহমদের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৪০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার পিতা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। আমার মেজো বোন বেবি আকতার আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে ফেলেন। তাই আমরা বলেছি- আমাদের প্রাপ্য বুঝে পাওয়ার পর বাবার লাশ দাফন করা হবে।
তবে বেবি আকতার অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমার পিতার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করিনি। তাদের অভিযোগগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর আমার ভাইয়েরা কোনো খোঁজ নেইনি। আমরা বোনেরা মিলে বাবার চিকিৎসা করিয়েছি। সবকিছু করেছি। এখন বাবার মৃত্যুর পর এসে তারা হিস্যা নিতে এসেছে।
মনির আহমদের ছোট মেয়ে লিপি আকতার জানান, আমার পিতা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমরা তিন বোন মিলে বাবার চিকিৎসা খরচ বহন করছি। একটি ভাইও কোনো সহযোগিতা করেনি। অবসরের টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে অবসরের টাকার বিষয় তুলে বাবার লাশ দাফন করতে দিচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ইউএনও সাহেব ও পুলিশের মধ্যস্থতায় বাবার লাশ দাফন হয়েছে। বিষয়টি সন্তান হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম জানান, অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মনির আহমদের সন্তানরা লাশ সড়কে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্সে ফেলে রাখে। রোববার রাত পর্যন্ত লাশ সড়কেই পড়ে থাকে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা ছেলেদের সঙ্গে কথা বলি। লাশ দাফনের পর এই পেনশনের টাকা সমবণ্টনের আশ্বাস দেই। পরে মনির আহমদের ছেলেরা শান্ত হয়।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, মনির আহমদ পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে কাজ করতেন। অবসর নেয়ার পর তিনি বাড়িতে ছিলেন। এরমধ্যে কিছুদিন আগে তার ক্যান্সার শনাক্ত হয়। তখন তার দুই ছেলে তেমন খোঁজখবর নেননি। তার তিন মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে তার চিকিৎসা করান। এরমধ্যে মনির আহমদ মারা যায় শনিবার সকালে। এরপর লাশ বাড়িতে আনা হলে তার ছেলেরা লাশ দাফনে বাধা দেন।
তাদের দাবি, বাবার পেনশনের টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর লাশ প্রায় দু’দিন ফ্রিজারে পড়ে ছিল। পরে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে লাশ দাফন করি।