মূল্য সংক্রান্ত জটিলতায় যশোরের বেনাপোল বন্দরে ২৯ দিন ধরে আটকে আছে এক হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনিসহ ৪২টি ভারতীয় ট্রাক।
গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এসব ট্রাক বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে আটকে আছে। এতে প্রচণ্ড শীতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা।
চিনির আমদানিকারক ‘সেতু এন্টারপ্রাইজের’ প্রতিনিধি ও বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে ছয়টি চালানে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করা হয়। ৮৪টি ট্রাকে করে এসব চিনি বেনাপোল বন্দরে আনা হয়।
“সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ মূল্যে শুল্কায়ন করার পর ৪২ ট্রাকে থাকা এক হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি খালাস নেওয়া হয়। পরে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন কম মূল্যে শুল্কায়নের অভিযোগ তুলে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানায়। তখন থেকেই বন্দরে ৪২টি ট্রাক আটকে আছে।”
বাড়তি মূল্যে এই চিনি খালাস করে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। আর বাড়তি মূল্যে চিনি খালাস করলে কয়েক লাখ টাকা আর্থিক লোকসান হবে আমদানিকারকের। তাই আমদানিকারক চিনি খালাস করছে না বলে জানান আব্দুল লতিফ।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ছয়টি চালানের মধ্যে তিনটি চালান সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ মূল্য পরিশোধ করে খালাস করা হয়েছে। সেখানে প্রতিটন চিনি ৪৩০ মার্কিন ডলার মূল্য ধরে খালাস করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি মেট্রিক টন চিনি ৪৩০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ (ট্যারিফ মূল্য) করে দিয়েছে চলতি বাজেটে। কিন্তু সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন হঠাৎ আমদানি মূল্য কম দেখানোর অভিযোগ করে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে।
সাজেদুর রহমান আরও বলেন, “পরে এসব চিনির ট্যারিফ মূল্য বাড়িয়ে প্রতিটন ৫৭০ মার্কিন ডলার করে দেওয়া হয়। প্রতিটন চিনিতে ১৪০ ডলার বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বাকি তিনটি চালানের চিনি খালাস নিলে আমদানিকারক লোকসানের মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন।”
বেনাপোল শুল্ক ভবনের যুগ্ম কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, চিনির তিনটি চালান বৈধ পন্থায় বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। তবে যেহেতু আমদানি মূল্য নিয়ে সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে একটি অভিযোগপত্র এসেছে তাই বিষয়টি শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে নিজেদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ভারতীয় ট্রাকচালক আশীষ সরকার বলেন, “এক মাস ধরে চিনি নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আটকে আছি। কবে খালাস হবে কিছুই জানি না। এই প্রচণ্ড শীতের রাতে ট্রাকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। গোসল, খাওয়া নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি।“
এদিকে বন্দরে ভারতীয় ট্রাক আটকে থাকায় প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি দুই হাজার টাকা করে ডেমারেজ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দরের চার্জ রয়েছে। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়বেন বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ‘সেতু এন্টারপ্রাইজের’ স্থানীয় প্রতিনিধি।