রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন




উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ৬:৩৪ pm
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র Kaptai Lake কাপ্তাই হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ... রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ।
file pic

পার্বত্য চট্টগ্রামে চলতি সপ্তাহে বৃষ্টিপাত না হলে কর্ণফুলীর কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় অস্বাভাবিক হারে নিচে নামছে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর। ফলে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে ধস নেমেছে। পাঁচ ইউনিটে ২৪২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রে গতকাল শনিবার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। বর্তমানে সেখানে চালু মাত্র একটি ইউনিট। ২৫ দিন ধরে চলছে এই অবস্থা। তবে কেন্দ্রের কোনো ইউনিটে যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। সবকটি ইউনিট উৎপাদনে সক্ষম হলেও শুধু পানির অভাবে সক্রিয় নেই। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই যায় জাতীয় গ্রিডে।

যদিও আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে টানা বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই পাহাড়ে। কালবৈশাখী হতে পারে। এ অবস্থায় কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এ টি এম আবদুজ্জাহের কালবেলাকে বলেন, হ্রদের পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক কষ্টে একটি ইউনিট চালু রেখেছি। গেল ২০-২৫ দিন ধরে পাঁচ ইউনিটের একটিতে উৎপাদন হচ্ছে।

যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. ছাদেকুল আলম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলতি সপ্তাহে একাধিক কালবৈশাখী হতে পারে। ওই সময় কয়েক ঘণ্টা থেমে থেমে বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। তবে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। মাত্র দু-এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে আশানুরূপ পানি বাড়বে না বলেই ধারণা করছি। পর্যাপ্ত পানির জন্য টানা বৃষ্টির বিকল্প নেই।

১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিশাল জলাধার সৃষ্টি হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মনুষ্যসৃষ্ট হ্রদ। নদীর তীরে ১৯৬২ সালে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু করা দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে আসে পানির ঢল। এতে হ্রদে পানি বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অক্টোবর মাসে কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ পানির স্তর থাকে। এরপর জলেভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্য বাঁধ দিয়ে পানি ছেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হ্রদের পানি ব্যবহার হওয়ায় নভেম্বরের পর ধীরে ধীরে পানি কমা শুরু করে। এপ্রিল মাসে তীব্র দাবদাহের কারণে হ্রদের পানি দ্রুত কমতে থাকে। তবে, মূল কারণ হ্রদটি একবারও ড্রেজিং না করা। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার টন বর্জ্য আর পলিমাটি পড়ে তলদেশ ভরাট হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের। ফলে নাব্য হারচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ধরনের জ্বালানি ছাড়া শুধু কাপ্তাই হ্রদের পানি ব্যবহার করে দেশের সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই কেন্দ্র। সব ইউনিট চালু থাকলে উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় মাত্র ১৮ পয়সা। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প-চালক হাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার বিকেলে জানান, ৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার চার নম্বর ইউনিটটি শুধু চালু আছে। ১২ ঘণ্টায় সেটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৫ মেগাওয়াট। হ্রদে দুপুর ১২টায় পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৭৪.৯৪ ফুট এমএসএল (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা), অথচ রুলকার্ভ অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ৮১.০৫ ফুট এমএসএল। বলেন, এখন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

জানা গেছে, কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকালে হ্রদের পানির গড় সর্বোচ্চ স্তর ছিল ১২০ ফুট এমএসএল। ১৯৭০ সালে জাইকার সমীক্ষায় পানির সর্বোচ্চ স্তর পাওয়া যায় ১১৮ ফুট এমএসএল। এরপর ধীরে ধীরে দখল-ভরাট ও পলি জমার কারণে পানির সর্বোচ্চ স্তর ১০৯ ফুটে নেমে আসে। ভরা বর্ষায় পাঁচটি ইউনিট চালু রাখা সম্ভব হলেও বছরের অধিকাংশ সময় একটি বা দুটি চালু রাখা যায়।

কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং না হওয়া এবং গেল বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে অস্বাভাবিকভাবে পানি কমে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ড্রেজিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ড্রেজিংয়ের জন্য হ্রদে খননযন্ত্র নেওয়ার কোনো উপায় নেই। তার পরও ২০২০-২০২১ সালে পাইলট প্রজেক্টের অধীনে এক্সক্যাভেটর দিয়ে খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একাধিক কারণে তা সফল হয়নি। খনন করে হ্রদের তুলনামূলক শক্ত মাটি ফেলার জায়গা পাওয়া যায়নি। তবুও প্রায় দুই লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হয়েছিল, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জানান, হ্রদের ড্রেজিং নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন থেকে নতুন করে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, তাই এই মুহূর্তে আমাদেরও কোনো পরিকল্পনা নেই।
কেমন আছে কাপ্তাই হ্রদ :

শুষ্ক মৌসুমে মোটেও ভালো থাকে না কর্ণফুলীর ঐতিহ্য কাপ্তাই হ্রদ। পানির স্তর চলে যায় তলানিতে। সরেজমিন দেখা যায়, হ্রদের কাইন্দেমুখ, মগবান, বন্দুকভাঙা, কাট্টলী বিলসহ একাধিক স্থানে গাছের গুঁড়ি থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে সতর্কচিহ্ন নেই প্রশাসনের। এতে নিরাপদে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভেসে ওঠা গাছের গুঁড়িগুলো নৌযানচালকরা এড়িয়ে যেতে পারলেও পানির নিচে থাকা গুঁড়ি ও ডুবোচর বা ডুবোটিলা দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে রাঙামাটি শহর থেকে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি যাওয়ার পথে। কাপ্তাই বাঁধের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি ডুবে যায়, যা ওই এলাকার মোট কৃষিজমির ৪০ শতাংশ। ডুবে যাওয়া জমিতে বেশ কিছু বনও ছিল। হ্রদে ভেসে ওঠা গাছের গুঁড়িগুলো ওই বনের। তবে কিছু এলাকায় মাছধরার জন্য জেলেরা গাছের গুঁড়ি ফেলেছেন।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ে গেল বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। তাই এবার শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি হ্রদে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD