চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলে এবার গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ কম। গত বছর এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলানয়তনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ফল প্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও খুদেবার্তার মাধ্যমে ফল দেখতে পাচ্ছেন।
২০২২ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুরু হয়ে ১ অক্টোবর শেষ হয়। প্রতিবছর এ পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে থাকলেও গত দুই বছর ধরে কোভিড-১৯ জনিত বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১৯ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিলেট বিভাগসহ ময়মনসিংহ অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হলে পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পরীক্ষার নতুন সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং শেষ হওয়ার পর সোমবার (২৮ নভেম্বর) ৫৮তম দিনে ফল প্রকাশ করা হলো।
ব্রিফিংয়ে জানানো বোর্ডগুলোর পাসের হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডে এবছর পাসের হার ৯০ দশমিক ০৩, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮৯ দশমিক ০২, বরিশাল বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৬১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৫৩, কুমিল্লা বোর্ডে ৯১ দশমিক ২৮, দিনাজপুর বোর্ডে ৮১ দশমিক ১৬, যশোর বোর্ডে ৯৫ দশমিক ১৭, রাজশাহী বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৮৮, সিলেট বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৮২, মাদরাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ২২ এবং কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নেওয়া মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৩ জন এবং ছাত্রী ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন। অংশ নেওয়া মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৮ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন।
এবছর গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন।
শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, এই পরীক্ষার জন্য সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা নৈর্বচনিক বিষয়সহ মোট ৯টি পত্রে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, গ্রুপভিত্তিক ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয় এবং চতুর্থ বিষয়) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অবশিষ্ট ৩টি বিষয়ের (বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়/সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জেএসসি/সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে জেডিসি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে নবম শ্রেণির ফলাফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়েছে।
পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসের আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রে অধিক বিকল্প প্রশ্ন রাখা হয়েছিল।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ২৬ হাজার ৫৮২ জন। এসএসসিতে মোট অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৫ জন এবং ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ। ছাত্র ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ছাত্রী ৮৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৯ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন। মোট কেন্দ্র ২ হাজার ২৪৬টি। মোট প্রতিষ্ঠান ১৭ হাজার ৭২৪।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৯০ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৪২ জন। অংশ নেওয়া মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১০ হাজার ৫০৬ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৩ হাজার ৩৭৭ জন। পাসের হার জিপিএ-৫ ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ হাজার ১৮৪ জন এবং ছাত্রী ৮ হাজার ২৭৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র ৮২ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ছাত্রী ৮৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট অংশ নেয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১০ হাজার ২২৮ জন এবং ছাত্রী ৩৫ হাজার ১২০ জন। অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মোট উত্তীর্ণ ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৯২৪ জন এবং ছাত্রী ৩২ হাজার ২৪১ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ছাত্রী ৯১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এবছর জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশ বেড়েছে। মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা শতাংশের হিসাবে ১৩ দশমিক। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী।
জিপিএ-৫ পাওয়া ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২১ জন ১৫৬ ছাত্র; আর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিখ্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রতিনিধি এবং মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখের বেশি। তিন হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। এরমধ্যে বিদেশের কেন্দ্র সংখ্যা ৮টি। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রায় ১৬ লাখ। ২০২১ সালের তুলনায় এবছর পরীক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন। মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৫৫৬টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ১১১টি।