শীতের জরাজীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই পলাশ ফুলের রঙিন পাঁপড়িতে নতুন সাজে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই পলাশ ফুলের মুগ্ধতা ছড়িয়ে স্বর্গীয় সৌন্দর্যে জানান দিচ্ছে বসন্ত বুঝি এলো রে। সে সঙ্গে ভালবাসা দিবসকেও যেন রাঙিয়ে তুলছে।
গ্রামীণ আবহে হরহামেশাই রাস্তার ধারে দেখা মেলে পালাশ গাছের। কিন্তু কংক্রিটের শহুরে জীবনে যার দেখা মেলা কষ্টস্বাধ্য বটে। প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত বসন্তের রুপকন্যা পলাশ ফুল এখন বিলুপ্তপ্রায়। “ও পলাশ ও শিমুল-কেন এ মন মোর রাঙালে-জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে”- ভারতীয় কন্ঠশিল্পী লতা মুঙ্গেশকরের এ গানটিই বুঝিয়ে দেয় এ ফুলগুলো কতটা হৃদয়ে দোলা দেয়।
বসন্তের শুরুতেই যেন প্রকৃতির ভালোবাসার কথা জানান দিতে হেঁসে উঠে পলাশ। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙের সাজ দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। পাখির কলকাকলিতে বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ডাকে আপন সুরে। ঋতুরাজের রূপ দেখে প্রকৃতি প্রেমী, প্রেমিক-প্রেমিকাসহ মোহিত প্রাণিকূলও মেতে উঠে মিলনের আনন্দে।
প্রায় ৫৫ একরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের লাইব্রেরি ভবনের সামনে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে দু’টি পলাশ গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠ, শহিদ মিনার চত্ত্বরে পলাশের রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সম্মুখে চওড়া পাপড়ি, পেছনে দুটি ডানার মত ছড়ানো এবং দুটি একত্রে বাঁকানো, পাখির ঠোঁটের মতো অরণ্যের অগ্নিশিখা পলাশ। যেন পহেলা ফাল্গুনের
আগাম বার্তা দিয়ে যায়। পলাশের সমারোহে ইঙ্গিত দেয় পলাশ যেন বসন্তেরই পূর্ণতা। বাংলা সাহিত্যে পলাশের প্রভাব অতিশয়। গানে, কবিতায় কোথায় নেই পলাশ? তবে শুধু এ কালের সাহিত্য নয়, পলাশ সুপ্রাচীনকালেও ছিল সমান আদরণীয়। মহাভারতের সভাপর্বে ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেখানে উদ্যান আর কৃত্রিম জলাধারের পাশেও ছিল পলাশ বৃক্ষের মাতামাতি।
পলাশের নয়ানাভিরাম সৌন্দর্য মন কেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তার প্রমাণ মিলছে গাছগুলোর চারপাশে। প্রিয়তমার হাতে শোভা পাচ্ছে গাছ থেকে ঝরে পড়া পলাশ ফুল। কেউবা আবার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত। পলাশ ফুল প্রেমিক যুগলদের আকৃষ্ট করলেও সিঙ্গলদের ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পলাশের আগুন ঝরানো রং মনে দাগকাটলেও প্রেমিক বা প্রেমিক না থাকায় ছবি তোলা থেকে বঞ্চিত হন তারা। তবে গোপালগঞ্জে বছর দশেক আগেও জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশে, হালটে পলাশ গাছ দেখা গেলেও এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। তাই প্রকৃতির সৌন্দয্য ধরে রাখতে পলাশ গাছ না কাটার পাশাপশি এ ফুলের গাছ লাগানোর দাবি প্রকৃতি প্রেমিদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী মানসিতা কবির শিওনা জানান, পলাশ ও শিমুল ফুল আমাদের প্রকৃতির উপাদান। আমরা যেটা দেখি প্রকৃতিপ্রেমি মানুষ যারা আছেন, প্রকৃতিকে অনুভব করতে ভালোবাসে তারা পলাশ ও শিমুলের গাছ লাগিয়ে থাকেন। পলাশ ও শিমুল ফুল প্রকৃতির সৌন্দয্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক দাস জানান, শীতের জড়তাকে কাটিয়ে প্রকৃতিকে আবার রাঙিয়ে তুলতে আমরা পলাশ ও শিমুল ফুলকে দেখতে পাই। কিন্তু বর্তমানে পলাশ ও শিমুল ফুল দেখাই যায় না। তীব্র গাছ কাটা ও না লাগানোর ফলে পলাশ ও শিমুল ফুল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
বশেমুরবিপ্রবির বাংলা বিভাগের সভাপতি মো. আব্দুর রহমান জানান, পলাশ ও শিমুল গাছ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে এবং প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে দেখা যেতো। আধুনিকতা আর নগরায়ণের ছোয়া পলাশ গাছ কেটে ফেলায় আর বীজ বপন না করায় এসব গাছের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। সৌন্দয্যবর্ধক গাছগুলো এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাখিরা তাদের আবাসস্থল হারিয়ে পড়ছে অস্তিত্ব সংকটে।
তিনি আরও জানান, আমাদের সচেতনতা দরকার যে একটা এলাকা বা যেকোন ভাবে প্রকৃতিকে সাজাতে হলে কয়েক ধরনের গাছ দরকার। বৈশ্বিক দূষণ আর জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে ধীরে ধীরে প্রতিটি ঋতুই হারাচ্ছে তার নিজস্ব বৈচিত্র আর সৌন্দয্যকে। প্রকৃতির স্বরূপ ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজন ব্যাপক বৃক্ষ রোপন। তাই ফলজ ও বনজ গাছের পাশাপশি সৌন্দয্যবর্ধ গাছ লাগানোর আহ্বান এ শিক্ষকের।